দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া দলটি সিলেটসহ সারাদেশের ইউনিয়নগুলোতে নিজ দলীয় নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলেও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নিয়ে চলছে সমালোচনা।
গতকাল রবিবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদকে উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়সের নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা।
এ বিষয়টি জানার পর থেকেই তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, শিবিরের সাবেক কট্টর নেতা কী করে হলেন বঙ্গবন্ধুর নৌকার মাঝি! যে কি না এক সময় ফেসবুক ওয়াল ভরিয়ে দিত আওয়ামী লীগ ও সরকারকে গালিগালাজ করে!
কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাবেক এই শিবির নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদের আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করে গালিগালাজ দেওয়ার বেশ কিছু পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যা গতকাল রবিবার থেকে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর উপজেলা ও জেলার রিপোর্টের ভিত্তিতে নৌকার প্রার্থীদের বাছাই করা হয়েছে। সেখানে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের মেসার্স আব্দুস সালাম ব্রিকস-এর স্বত্বাধিকারী ও খাগাইল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০১০ সাল পর্যন্ত সিলেট সদর উত্তরের শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। এর আগে ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৬-০৭ সেশনে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে খোলস পাল্টে হয়ে যান নব্য আওয়ামী লীগ। ২০১০ সালে শিবিরের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চলে যান লন্ডনে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত জামায়াতের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন।
ইকবাল হোসেন ইমাদ নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিগত দিনের সরকারবিরোধী অপতৎপরতার বিষয়গুলো তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মী। ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে অধ্যাপক গোলাম আযম, একটি নাম, একটি ইতিহাস-বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ইমাদ। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির বিরুদ্ধে ‘সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জামায়াত ইসলামীর’-এমন স্ট্যাটাসও দেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইকবাল হোসেন ইমাদের নেতিবাচক স্ট্যাটাসও সংগ্রহে রেখেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৫ সালে সাইফুর রহমান কলেজের শিবিরের সভাপতি ও ২০০৭ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সেক্রেটারির দ্বায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে সদর উত্তর-এর সেক্রেটারি ছিলেন।
স্থানীয় জামায়াত-শিবির সূত্র নিশ্চিত করলেও সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেন রণিখাই ইউনিয়নের নৌকার কান্ডারি সাবেক শিবির নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদ।
সোমবার বিকেলে তিনি বলেন, আমি ২০০৭ সালে লন্ডন চলে যাই। ২০১৬ সালে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আমি কখনোই জামাত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। এসব অপপ্রচার। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই আইডি আমার নয়।
এ বিষয়ে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিম বলেন, আমার জানামতে-ইকবাল হোসেন ইমাদ শিবিরের নেতা ছিল না। হাইব্রিডরা অনেক কিছু বলবে, এটা আমলে নেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। একজনের মাথা কেটে আরেকজনের শরীরে লাগিয়ে ফেসবুকে দেয়া যায়।
সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘শিবির নেতা ইকবাল আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেন ইমাদ এক মানুষ নয়। দু'জন আলাদা মানুষ। এছাড়াও নৌকার প্রার্থী শিবিরের সাবেক নেতা হলে বিষয়টি তো আমার জানার কথা নয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দই সেটি ভালো করে জানার কথা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারিকে আমি বলে দিয়েছি- দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সবার সামনে স্পষ্ট করতে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন