২৭ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শুক্রবার ছিল ১৩ তম দিন। ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণ ছিল জমজমাট। সকাল থেকেই মেলায় ছিল ভিড়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলায় দর্শনার্থীদের প্রচুর চাপ লক্ষ্য করা গেছে। দুপুরের পর দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন ধরে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মেলা শুরুর পর ছুটির দিন ছাড়া বেচাকেনা কম হলেও আজ মেলায় ভালো বেচাকেনা হয়েছে। তবে এখন পযর্ন্ত কাঙ্খিত বেচাকেনা হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। মেলার সকল প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে ছিল প্রচুর ভিড়।
মেলাতে প্রবেশ টিকিটের ইজারাদার আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ও রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ছালাউদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার ৪৮ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছিল, এ শুক্রবারেও টিকিট বিক্রি আরও বাড়বে আশা করি।
মেলায় ভিড় দেখা গেছে জামদানী শাড়ি, শীতের কাপড়ের দোকানে। নৌসিন জামদানী উইভিং ফ্যাক্টরীর মালিক মো. নাঈম জানান, মেলায় এখন মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। জামদানী শাড়ি, শীতের শাল, জামদানী থ্রি পিছ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কোর্ট, ব্লেজারের স্টল রায়হান ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সানোয়ার জানান, তাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। তবে খুব ভালো নয়। এছাড়া ভিড় ছিল ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানেও। দিল্লি অ্যালুমিনিয়াম প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধি খোরশেদ আলম জানান, বেচাকেনা মোটামুটি, তবে গতবারের তুলনায় কম। সামনে আরও ভালো বেচাকেনা হবে আশা করি।
মেলা উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন বেশীর ভাগ ব্যবসায়ী। ক্রোকারিজ পণ্য ডিজনি ইতালি প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. শাকিল বলেন, মেলা উপলক্ষ্যে তারা সকল পণ্যে ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন। একটি প্যাকেজে ৬০ হাজার টাকার ১১টি পণ্য মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ৪৮ হাজার টাকায়। তবে মেলায় দর্শনার্থী থাকলেও সে তুলনায় ক্রেতা কম। লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা শঙ্কায় আছেন তিনি।
ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার প্যাভিলিয়নের ক্রেতা দর্শনার্থীর ভিড় ছিল, হাতিল ফার্নিচারের সিনিয়ন অফিসার খালেকুজ্জামান সুমন বলেন, দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা কম। তবে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। জেভিকো ইলেকট্রনিক্স এর বিক্রয় প্রতিনিধি মো. রিফাতও একই কথা বলেন।
এবারের মেলায় বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছে কোটি টাকার খাট। সেগুন কাঠের বিশেষ এ খাটটি মেলায় এনেছে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। এর পরিচালক অন্তর মাহমুদ জানান, সম্পূর্ণ সেগুন কাঠের এ বিশেষ খাটটি তৈরি করতে ৩ বছর ২ মাস সময় লেগেছে। এ খাটটির একমাত্র একটি ডিজাইনই খাকবে। দাম এক কোটি টাকা চাইলেও এখন পরযন্ত ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে।
মেলায় আগত ক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলাতে জিনিসপত্রের দাম বেশি। রূপগঞ্জের বরপা এলাকা খেকে আগত আইভি ফরহাদ বলেন, স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে মেলা উপলক্ষে কিছু ছাড় ও অফার থাকলেও তা অন্যান্য মেলার তুলনায় কম। তবে তিনি মেলার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আজকে (শুক্রবার) মেলায় দেড় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী বেচাকেনা কম হচ্ছে এমন অভিযোগে তিনি বলেন, সব দোকানে এক রকম বেচাকেনা হয় না, কেউ বেশী কেউ কম বিক্রি করবে এটাই স্বাভাবিক। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সবাই কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ঢাকার বাইরে পূর্বাচল উপশহরের ৪ নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে চলছে এ মেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মেলার উদ্বোধন করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবারের বাণিজ্য মেলায় ১২ টি দেশের ২৫০ টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৪২টি প্যাভিলিয়ন, ৩১টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ২৩৮টি জেনারেল স্টল, এবং ২৩টি খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়াসহ ১২টি দেশ বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল