পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনার উপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। তবে চীনের উপর অধিক শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত বিষয়টি এমন নয়। এই সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর জোর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতেও জোর দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস অ্যান্ড বাংলাদেশ কমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব পরামর্শ আসে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করেছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ওপর ১.২৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করেছে।
তিনি বলেন, ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যারা মনে করেন, চীনের উপর বেশি হারে ট্যারিফ আরোপ করায় বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে চীন ‘ম্যান-মেড ফাইবার’ পোশাক রফতানি করে। আর বাংলাদেশের রফতানির ৭০ ভাগ কটন। ফলে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনও একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সেই সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আলোচনার উপর নির্ভর করবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কি কি ধরণের সুবিধা নিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুব কম, সেটি কিভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পলিসির উপর।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের এই ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কি হয়, সেটার উপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি যদি ২০০ শতাংশ বাড়াই ও রফতানি যদি ৫০ শতাংশ বাড়াই তবেই শুল্ক শূণ্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনও নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়া বাংলাদেশের করণীয় এখনও নির্ধারিত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি বাজার বড় করতে হবে। এশিয়ার বাজারে নজর দিতে হবে। এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় জায়গা।
ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্কনীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দেশগুলোর উপর শুল্ক কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার উপর ভিত্তি করে বায়ারদে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোশিয়েট করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। আগামীতে আমাদের রফতানির কিছুটা কমাতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক তাতে যেন সরকারের সহযোগিতা থাকে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির চেয়ারাম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, এইচএসবিসি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাহবুব উর রহমান, বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/একেএ