মাদরাসাশিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য দুটি- ১. তালিম ২. তরবিয়াত। একবার আমি ঢাকার মতিঝিল মাদরাসায় গিয়েছিলাম খতমে কোরআন ও খতমে বুখারির অনুষ্ঠানে। সেই মাহফিলে ওই মাদরাসার কমিটির একজন বলছিলেন, কওমি মাদরাসার শিক্ষানীতিতে সবই আছে কিন্তু সামান্য কিছু বাকি আছে। কী জিনিসটা বাকি আছে তা তিনি বলতে পারেন না। শুধু বলেন, সংগীত নেই, পতাকা নেই। আমি তাকে বললাম, কওমি মাদরাসাশিক্ষায় যেসব বিষয় এখনো বাকি আছে তাহলো ফ্রি সেক্স, জেনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, প্রতারণা বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া কওমি মাদরাসায় দুনিয়া-আখেরাতের সবকিছুই শিক্ষা দেওয়া হয়।
অনেকে দুনিয়া থেকে আখেরাতকে পৃথকভাবে দেখে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। আত্মাবিহীন শরীর এবং শরীরবিহীন আত্মার কোনো দাম নেই। তৎরূপ দুনিয়া থেকে আখেরাতকে আলাদা করা যাবে না। যারা দুনিয়াকে আলাদা করে দেখবে তারা হয়তো ইহুদি বা খ্রিস্টান হবে। ইহুদিরা আখেরাত বোঝে না। তারা শুধু বস্তু বস্তু করে। আর খ্রিস্টানদের মধ্যে অনেকে আখেরাত করতে করতে দুনিয়াবিরাগী হয়ে যায়। কিন্তু ইসলাম আখেরাত ও দুনিয়াকে দুভাগ করে দেখে না। দুনিয়া শরীর আর আখেরাত হলো তার আত্মা। এই হলো এ দুটির সম্পর্ক।
পৃথিবীতে যত অত্যাধুনিক শিক্ষা চালু আছে তার সবই শুধু বড় গলার আওয়াজ। আমি মতিঝিলের মাহফিলে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম, পৃথিবীতে তোমাদের যত শিক্ষানীতি আছে তার একটি করে দেখাও, যাতে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। ইহুদি, খ্রিস্টান ও পাশ্চাত্যের যেকোনো একটি শিক্ষানীতি এনে দেখাও, যাতে দুনিয়া-আখেরাতের সব বিষয়ের সমাধান আছে। যারা নারী অধিকারের আওয়াজ তুলে পৃথিবীব্যাপী মাতলামি শুরু করেছে, তারাই নারীদের অধিকার বিভিন্নভাবে হরণ করছে। যারা এ কাজ করছে তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত। সেখানে কোনো আলেম, মুফতি, হাফেজ নেই। আমি শবেবরাতের রাতে গুলশানে বয়ানে বলেছিলাম, যারা নারীর মোহরানা আদায় করেননি তাদের জন্য এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে লাভ নেই।
ইসলামের বিধান হলো, নারী দুই জায়গা থেকে সম্পত্তির ওয়ারিস হবে। ১. বাপের বাড়ি থেকে, ২. স্বামীর বাড়ি থেকে। স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পুরুষের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। অথচ নারীর অধিকার নিয়ে মায়াকান্নাকারীরা আজ বহু নারীকে অফিস-ফ্যাক্টরি, গার্মেন্ট ও খেতখামারের কাজে লাগিয়ে রেখেছে। এটা কী তাদের অধিকার আদায় করা হলো, নাকি অধিকারকে হরণ করা হলো? ইসলাম নারীদের রানির আসনে বসিয়েছে। তারা ঘরে বসে থাকবে আর স্বামীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করে স্ত্রীদের হাতে এনে দেবে। অতীব দুঃখের বিষয়, আজ নারীদের মুরগির বাচ্চার ন্যায় রাস্তাঘাটে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আর চিলের ন্যায় একদল মনুষ্যত্বহীন পুরুষ তাদের ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
ইসলামের আইনে বোন পাবে ভাইয়ের অর্ধেক আইউব খান পাকিস্তান আমলে পারিবারিক আইন চালু করে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে আইন গ্রহণ করেনি। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানের দ্বারা জুলুমের শিকার হয়েছে। এ দেশের মানুষের নিজস্ব জাতিসত্তা রয়েছে। পাকিস্তানের আইন বাংলাদেশে চলতে পারে না।
পঞ্চাশ-ষাট বছর ধরে যারা নারী অধিকার নিয়ে চেঁচামেচি করছে, দেখা যায় যে শতকরা আশি ভাগ নারীকে তারা সবচেয়ে নিম্নমানের কাজে লাগিয়ে রেখেছে। যেমন রাস্তা পরিষ্কার করা, সুইপারি, ইট ভাঙা ইত্যাদি। মাস শেষে বেতন পায় মাত্র কয়েক হাজার টাকা। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান পাবে এই আইন সরকার করবে না। কারণ সরকার বারবার বলে আসছে যে ইসলামবিরোধী কোনো আইন করা হবে না। যদি সম্পত্তিতে সমান করতে চায় তাহলে অমুসলিমদের জন্য করা যেতে পারে। কারণ ইহুদি-খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মে নারীদের জন্য এক ইঞ্চি জমিও বরাদ্দ নেই। আল্লাহপাক নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিষয়ে কোরআনে কারিমে সুস্পষ্ট ও অতি সুন্দর বিধান উল্লেখ করেছেন। এরপর কোরআনের একটি সুরার নাম নিসা [মেয়ে] নির্ধারণ করে তাদের মহা সম্মানিতও করেছেন। ‘রিযাল’ [পুরুষ] নামে কোনো সুরা নেই। সুরা বাকারা [গাভি] নাহল [মৌমাছি] ইত্যাদি নামে সুরা অবতীর্ণ করেছেন। কিন্তু সুরাতুর রিযাল নামে কোনো সুরা আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে বিশেষ তিনটি ওসিয়তের একটি ওসিয়ত করে গিয়েছেন যে হে আমার উম্মতরা? তোমরা নারীদের কষ্ট দিও না। তাদের কষ্ট দিলে আমি কষ্ট পাই। নারীদের জন্য লোকদেখানো সেøাগানধারীরা যদি ‘সম্পত্তিতে পুরুষের সমান পাবে নারী’-এই আইন করতে চায় সর্বাগ্রে তারাই এই আইনের আওতায় প্রথম পাকড়াও হবে। আমি গুলশানে জুমার বয়ানে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে কজন স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন? যারা আজ অধিকার অধিকার বলে মুখে ফেনা তুলছে তাদের ৯০ শতাংশের বেশির প্রতি নারীদের অভিযোগ রয়েছে যে তারা স্ত্রীদের কষ্ট দেয়, নির্যাতন করে, স্ত্রীর মোহরানা আদায় করে না।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ