সকালবেলা এক শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী বোনের ছবি পোস্ট করেছিলাম! কারো কাছ থেকেই ধনাত্মক সাড়া না পেয়ে নিজেই তার সাথে ইশারায় কথা বললাম! তাকে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ধরে বিভিন্ন এলাকার ছবি দেখালাম, নদী, আগুন, মিয়ানমার আর্মিসহ অনেকের ছবি দেখালাম... মিয়ানমার আর্মির ছবি দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়, সেই সাথে আঙ্গুল দিয়ে বারবার ইশারা করে...
এরপর যখন আমি নদীতে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখাই, তখন সে পানি বোঝাতে কাঁধে কলস নেয়ার অঙ্গভঙ্গি করে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখায়!!
তারপর যখন ছেলে মেয়ে আছে কিনা বুঝাই, তখন সে হাত দিয়ে ছোট বড় বাচ্চাদের ইশারা করে এবং বুঝায়, তারা অনেক দূরে আছে। কেউ একজন তাঁকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে চলে যায় সেটিও বুঝায় সে...আমার কক্ষে বাসের ছবি দেখে সেটিই ইশারায় দেখায় সে...
সর্বশেষ হাত দিয়ে যখন গুলি করার দৃশ্য দেখাই তখন সে ছুরি দিয়ে গলা কাটার দৃশ্য দেখায়। তার স্বামী আর বাবাকে সম্ভবত মেরে ফেলা হয়েছে, আর ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলি লেগেছে সম্ভবত।
সর্বশেষ আমি তাকে 'কুখ্যাত' অর্থে বিখ্যাত 'অং সাং সুচি'র' ছবি দেখাই... আবারও বোনটি চোখ বড় বড় করে ফেলে এবং চিনে ফেলার অনুভূতি প্রকাশ করে...এবং হাত দিয়ে বোঝায় সে অনেক দূর থেকে বাসে করে চলে এসেছে...
সর্বশেষ যা উপলব্ধিতে আসে তা হলো এই প্রতিবন্ধী বোনটি মিয়ানমার থেকে আসা... কক্সবাজার থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আজ রাতে তাকে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পাঠালাম...
আসার সময় দুইবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, চোখটা ভিজে যাচ্ছিল বারবার, আত্মীয় পরিজন ছাড়া অজানা শহরে আনমনে ঘুরে বেড়ানো এই বোনটিকে স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। হয়তো কেউ আছে তাঁর, আবার হয়তো সকলেই মারা পড়েছে!!
হায় সুচি! একদিকে তোমাদের জঘন্য অনাচার, অন্যদিকে বাংলাদেশিদের ভালবাসা! মূল্য কিছুটা দিতে হবে হয়তো, কিন্তু এই পাড়ে এসে ভালবাসা ও মানবতা হেরে যায়নি কারণ সত্যিকারের ভালবাসার প্রতীক এক মা আছেন এখানে, যেখানে হেরে যায় তোমার/তোমাদের সুদীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় লব্ধ অর্জন ও সুখ্যাতি!
বোনটি ভাল থাক, প্রিয়জন ফিরে পাক...
লেখক: পুলিশ অফিসার। (ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/০৫ অক্টোবর, ২০১৭/মাহবুব