ডায়াবেটিসে দেখা দেয় নানা ধরনের জটিলতা। তবে এই রোগ হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পায়ের যত্ন। কেননা ডায়াবেটিসে পায়ের সমস্যা যেমন ইনফেকশন, ক্ষত হওয়া, গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একটা বড় কারণ।
পায়ের সমস্যার প্রাদুর্ভাব
• ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের ৩ থেকে ৮ ভাগ
• একবার ক্ষত হলে পরবর্তী পাঁচ বছরে ক্ষত হওয়র ঝুঁকি ৫০ থেকে ৭০ ভাগ বেড়ে যায়
• ডায়াবেটিক রোগীদের পা কেটে ফেলার মতো সমস্যার ৮৫ ভাগই ছোট ক্ষত দিয়ে শুরু হয়
• শরীরের নিম্নাংশ কেটে ফেলার কারণগুলোর মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ ভাগই হয় ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার কারণে। আর এসব রোগীদের পায়ের ক্ষত শুকাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৪ সপ্তাহ।
অন্যান্য যেসব কারণে পায়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেগুলো হলো
• পায়ের জুতা সঠিক না হলে
• পায়ের যথেষ্ট যত্ন না নিলে
• পায়ে আঘাত লাগলে
• ধূমপান/তামাক গ্রহণ করলে
নীচের যে কোন একটি বিদ্যমান থাকলে সেটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পা এবং সেক্ষেত্রে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
• পায়ের রক্তচলাচল বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়া
• পায়ের অনুভূতি না থাকা বা কমে যাওয়া
• আকৃতিগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হওয়া
• পা নাড়াচাড়া করতে না পারা
• পায়ে আগে কোন ক্ষত থাকলে
• পা আগে কোন কারণে কেটে ফেলা
ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের সাধারণ সমস্যাসমূহ
• কর্ণ/ক্যালাস
• ফোস্কা পড়া
• বুনিয়ন
• ছত্রাকের আক্রমণ
• কেটে যাওয়া
• ক্ষত হওয়া
• গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি
পা পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ: প্রতি তিন মাস থেকে এক বছর সময়ের ভিতর পায়ের বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করা জরুরী
- ত্বক
- রং
- তাপমাত্রা
- ক্যালাস আছে কিনা
• কোন হাড় বা জোড়ার অসামঞ্জস্যতা আছে কিনা
• ইনফেকশনের কোন লক্ষণ আছে কিনা
- অস্বাভাবিক গরম থাকা
- লাল হয়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া
- ব্যথা হওয়া
- পুঁজ বা পানি বের হওয়া
- রক্তক্ষরণ আছে কিনা
- পুরু নখ আছে কিনা
- আগে কোন ক্ষত বা কেটে ফেলা হয়েছে কিনা
- রক্ত চলাচল ঠিক আছে কিনা
- কম্পনের অনুভূতি ঠিক আছে কিনা
- গরম/ঠান্ডার অনুভূতি ঠিক আছে কিনা
- পরিধান করা জুতা/স্যান্ডেল আদর্শ কিনা
নিজে পা পরীক্ষা
- সম্ভব হলে প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করা, বিশেষ করে উপরের দিক, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে এবং পায়ের তলা ভালভাবে পরীক্ষা করা জরুরী
- অনুভব করা এবং খুঁজে দেখা- পায়ে কোন ক্ষত, ফোস্কা, ঘা, রঙ বদলে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া আছে কিনা
- পায়ের তলা দেখার জন্য প্রয়োজনে বন্ধু/পরিবারের অন্য সদস্য/আয়নার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে
পায়ের যত্নের উল্লেখযোগ্য বিষয়
• পা কখনো শুকনো ও খসখসে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে লোশন বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে হবে
• পায়ের আঙ্গুলের মাঝখানের জায়গাগুলো যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী
• পায়ের নখগুলো খুব বেশী ছোট করা ঠিক নয়, বিশেষ করে নখের কোণা গভীর করে কাটা উচিত নয়
• বেশী গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা বা পরিষ্কার করা উচিত নয়
• কখনোই খালি পায়ে থাকা উচিত না
• জুতা অবশ্যই নরম, মাপমত হওয়া জরুরী
• মোজা অবশ্যই সুতা বা উলের হওয়া উচিত এবং মোজার উপরের দিকের রাবার খুব বেশী টাইট হওয়া উচিত নয়
• নতুন জুতা কেনার সময় বিকেলের দিকে কেনা উচিত এবং অবশ্যই মোটা মোজা পরে সাইজ পরীক্ষা করা উচিত
• প্রথম দিনই দীর্ঘসময় নতুন জুতা পরে না থাকাই শ্রেয়
• পায়ে যে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন
যে সকল উপসর্গ থাকলে জরুরী চিকিতৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন
• পায়ে ব্যথা হওয়া
• পা লাল হওলা বা রঙ পরিবর্তন হওয়া
• পা খুব গরম হয়ে যাওয়া
• পায়ে কোন রকম দুর্গন্ধ হওয়া
• পা থেকে কোন ধরনের রস নি:সৃত হওয়া
• পায়ে ক্ষত বা ফোস্কা দেখা দেওয়া
• অন্য যে কোন সমস্যা হওয়া
যা করা উচিত
• প্রতিদিন পা পরীক্ষা করা
• সঠিক জুতা/স্যান্ডেল পরিধান করা
• জুতা অবশ্যই মোজাসহ পরিধান করা
• জুতা পরার আগে কোন লোহার টুকরা/ ইটের টুকরা আছে কিনা দেখা
• ধর্মীয় স্থান যেখানে খালি পায়ে হাটতে হবে সেখানে সকালের দিকে ভ্রমণ করা
• নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
যা করা উচিত নয়
• খালি পায়ে কখনোই থাকা যাবে না, এমনকি ঘরের ভিতরেও না
• সরু প্রান্ত বিশিষ্ট জুতা ব্যবহার করা
• নিজে নিজে কোনরকম ঔষধ দিয়ে বা ব্লেড দিয়ে কর্ণ/ক্যালাস এর চিকিতৎসা করা
• ধূমপান/তামাক খাওয়া
লেখক : হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ইং/ রোকেয়া।