পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন পবিত্র আশুরা বা ১০ মহররম। আশুরার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বহু নবী-রসুলের। হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয় এদিন। হজরত নুহ (আ.)-এর মহাপ্লাবন থেকে মুক্ত হয়ে প্রথম জমিনে নামা ও শুকরিয়া-স্বরূপ রোজা রাখাও হয়েছিল এই দিনে। এই দিনে মহান আল্লাহ ইউনুস (আ.)-এর কওমের তওবা কবুল করেছিলেন। কোরআনের সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর একটি মহররম।
কোরআনে মহররমকে আল্লাহর মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি ইবাদত এবং দোয়া কবুলের মাস। এ মাসে আল্লাহ হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়াকে ক্ষমা করেন। অজস্র রহমতের ঘটনা ঘটেছে এই মাসে। মহররমের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে এর ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরায় নফল রোজা রাখা। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম, তিরমিজি।
হাদিসটিতে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মহররমকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে; যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে বলা হয়নি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ বুখারি।
সাহাবায়ে কিরামও আশুরায় রোজা রাখতেন। হজরত মুসা (আ.) এবং অন্য নবীরাও আশুরার দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ মুসলিম, তিরমিজি।
তবে রোজা রাখতে হবে দুই দিন- আশুরার দিনের সঙ্গে আগে এক দিন অথবা পরে এক দিন মিলিয়ে। এই দিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলের জন্য লোহিত সাগর পার হওয়ার রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার দলবলকে ডুবিয়ে মেরেছেন। বুখারি।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা উত্তর দিল, এই দিনে আমাদের নবী মুসা ও তাঁর অনুসারীদের আল্লাহ সমুদ্র পার করিয়েছেন এবং ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন। তাই এর শুকরিয়া আদায় করে আমরা এই দিনে রোজা রাখি।
তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি অধিকার রাখি। এরপর সাহাবিদের তিনি বললেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করে আশুরার আগে বা পরে আরও এক দিন রোজা রাখো।’ মুসনাদে আহমাদ।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ