বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ইউরোপে যখন 'মেড ইন বাংলাদেশ' পণ্য দেখি তখন বুকটা ভরে যায়। পৃথিবীজুড়ে বিশেষকরে ইউরোপে বাংলাদেশের সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরের মঙ্গা তাড়িয়েছে আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে আরএফএল। সেই ধারাবাহিকতায় গঙ্গাচড়া এখন উন্নয়নের পথে। আর এই পথে রংপুরে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বাইসাইকেল ফ্যাক্টরি উদ্বোধনের মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আরএফএল বাইসাইকেলের আরো একটি কারখানার উদ্বোধন কালে এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরির পিছনে না ছুটে মানুষকে উদ্যোক্তা হতে বলেছেন। আমরা সকল উদ্যোক্তাকে তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ করছি। উদ্যোক্তা হতেও অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়। বাধা পেরিয়ে সফলতার মাঝে আনন্দ অর্ন্তনিহিত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যুদ্ধের সময় লড়াই করে দেশকে মুক্ত করেছি। এখন দেশের অথনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ-আরএফএল এখন কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে, গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করছে। ভারতের সব জায়গায় বিশেষ করে আসামে প্রাণ এর পণ্য ছেয়ে গেছে। এগুলো সবই আমাদের বিজয়গাঁথা।
উদ্বোধন শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় শিল্প উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। উদ্যোক্তারা চেষ্টা, পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষের কর্মংস্থান তৈরী করছে। তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর হলে দেশের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলে ইকোনমিক জোন স্থাপনে জমিগত সমস্যা থাকতে পারে। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে কথা বলবো। তবে যদি কেউ নিজেরাই ইকোনোমিক জোন তৈরী করতে চায়, তবে আমরা তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। ইকোনমিক জোন স্থাপনে আমরা ছোট ছোট সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।
স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রায় ৭০ হাজার বর্গফুটের এ কারখানাটিতে বাইসাইকেল ছাড়াও ফ্রেম, ফর্ক, টায়ার, টিউবসহ সাইকেলের কিছু কম্পোনেট উৎপাদন করা হবে। এ কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এতে প্রায় ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আরএফএল গ্রুপ ২০১৪ সাল থেকে বাইসাইকেল উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আরএফএলের বাইসাইকেলের প্রথম কারখানাটি অবস্থিত। বর্তমানে কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে বছরে আট লাখ পিস। আরএফএলের উৎপাদিত বাইসাইকেল বর্তমানে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানী, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ ১৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়। তাছাড়া ‘দুরন্ত’ নামে বাজারজাত হওয়া আরএফএল গ্রুপের উৎপাদিত বাইসাইকেল দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়।
অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আরএফএল গ্রুপ বাইসাইকেলের দ্বিতীয় কারখানা চালু করলো। স্থানীয় বাজারের সকল সাইকেল এখানে তৈরি করা হবে। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে গেলে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ছয় লাখ পিস। এ ছাড়া এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি করার উদ্দেশ্য এ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, পুলিশ সুপার মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী ও আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল বক্তব্য রাখেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন