ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জণগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে সুফিদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্প্রতি তুরষ্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্ক সরকারের সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব মডারেশন স্কলার্স’র আয়োজনে বিভিন্ন দেশের প্রায় শতাধিক সুফি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলন বুধবার (১৬ এপ্রিল) সম্পন্ন হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের বর্তমান পীর, পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সুফিজ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি’র চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
সম্মেলনের সমাপনী দিবসে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার অধিকার আদায়ে সুফিদের কে খানকাহ্ থেকে বেরিয়ে ময়দানে নেমে আসতে হবে। সুফিদের আধ্যাত্মবাদের যেমন সোনালী ইতিহাস আছে, তেমনি দ্বীন, মানবতা ও স্বদেশ রক্ষায় তাদের লড়াই সংগ্রামের দৃষ্টান্তও রয়েছে। সত্যিকারের জিহাদ তখনই সম্ভব যখন সেই জিহাদে নেতৃত্ব দেবেন আধ্যাত্মিকতার আলোতে উদ্ভাসিত ঈমানী চেতনাধারী মুমিন সুফি-সাধকগণ। এছাড়া সবই ফিতনা ও জঙ্গিবাদে পরিণত হবে। যা কল্যাণের চাইতে অকল্যাণই বেশি ডেকে আনবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বের এমন কোনো যুদ্ধ আইন নেই, যে আইনে গণহত্যা করা বৈধ। আমরা দেখছি, মানবতার ধোঁয়া ওড়ানো বিশ্ব মোড়লরা নিশ্চুপ। মসজিদুল আকসা এবং ফিলিস্তিনকে রক্ষা করার জন্য ওআইসি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তারাও আজ নিজীব। ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত সুফি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, আর বসে থাকার সময় নেই, নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার অধিকার আদায়ে সুফিদের কে খানকাহ্ থেকে বেরিয়ে ময়দানে নেমে আসতে হবে।
‘ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব মডারেশন স্কলার্স’র সাধারণ সম্পাদক মুফতি ড. শেখ আজজান আল হাদিদ আল হোসাইনীর সভাপতিত্বে ইস্তাম্বুলের মুফতি ড. মোহাম্মাদ আহমদ আলী ওগুলু, সৌদিআরব মদিনার শেখ ড. মোহাম্মাদ আহমাদ আল আরাফাজ, মরক্কোর শেখ আলী বিন ইদ্রিসে, ইউক্রেনের মুফতি ড. শেখ আহমেদ তামিম, ইরাকের কুর্দিসতানের মুফতি ড. শেখ হাসান, আমেরিকার কেলিফোরনীয়ার মূফতি ড. শেখ বিল্লাল, তিউনিসিয়ার ড. শেখ বদরি আল মাদানী, ডেনমার্কের শেখ মালিক জহুর হোসেন, ইরাক শেখ কারী আব্দুল্লাহ সেলিম আগা, ইরাকের শেখ সাইয়েদ মোহাম্মাদ, ইরাকের মূফতি ড. শেখ আনাছ মাহমুদ, অস্ট্রেলিয়া সিডনি মূফতি ড. শেখ আব্দুল্লাহ নাসের শামসিন, জর্ডানের মূফতি ড. সাফওয়ান মোহাম্মাদ, জর্দানের ড.মোহাম্মাদ আলাইকুম, জর্ডানের জ. শেখ আল জুহানী, জার্মানি ড. আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ, সেনেগাল এর ড. মোরতুদা বোউছু, মৌরতানিয়া ড. শেখ সিঁড়ি মোহাম্মাদ বালাহি, আলজেরিয়ার মূফতি শেখ নাসের বনিফ আল ইদ্রিসি আল হোসাইনী, আলজেরিয়ার শেখ ড. ইউনুস ইব্রাহিম, লিবিয়ার শেখ নাইজারআবু জাইদ, শেখ ইসমাইল আসিফ হামা, সোমালিয়ার ড.আবদুল রশিদ, প্রেসিডেন্ট দারুল উলুম ইউনিভার্সিটি, সোমালিয়ার ড. মোহাম্মাদ বালাওহি, তুরস্কের ওয়াকফের কর্মকর্তা, একাডেমির ডাইরেক্টরবৃন্দসহ সম্মলনে অনেকেই বক্তব্য প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, তুরস্কের ‘ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব মডারেশন স্কলার্স’ এর আমন্ত্রণে বিএসপি চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী তুরস্ক সফররত আছেন।
রবিবার রাতে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। ১০ দিনব্যাপী তুরস্ক সফর সম্পন্ন করে সেখান থেকে তিনি আগামী ২১ এপ্রিল চার দিনের সফরে সৌদি আরবে গমন করবেন। তুরস্ক ও সৌদি প্রায় দুই সপ্তাহের এই সফরে তিনি আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলন ছাড়াও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, সুফি সাধকদের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। তুরস্ক ও সৌদির ১৪ দিনের সফর শেষ করে আগামী ২৬ এপ্রিল দেশে ফিরবেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত