২০১৯ সালের আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে হবে বাংলাদেশকে- এ নিয়ে তোলপাড় দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। বাছাইপর্ব খেলার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেটার, ক্রিকেটপ্রেমীদের কেউই। তবে বাছাইপর্ব খেলার যে নিয়মনীতি কষেছে আইসিসি, সেটা ডিঙানোর রাস্তাও কিন্তু রয়েছে বাংলাদেশের। এজন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৮'র মধ্যে জায়গা করে নিতে হবে মুশফিকুর রহিমদের। বাছাইপর্ব খেলার বিষয়টি জানতেন না বলে জোর গলায় বলছেন বিসিবি পরিচালকরা। অথচ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে যে ক্রিকেট ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন তারা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাদের মেধা নিয়ে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ফেব্রুয়ারি-মার্চে। অথচ তার আগে টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিপিএলের তৃতীয় আসরের তারিখ ঘোষণা করেছে বিসিবি। অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ২০ ওভার ম্যাচ খেলার টেম্পারমেন্ট নিয়ে টাইগার ক্রিকেটাররা অংশ নিবেন ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। অবশ্য বিসিবি সূত্র জানাচ্ছে, বিপিএলের নির্ধারিত স্লটে ওয়ানডে টুর্নামেন্ট হতে পারে।
বিসিবির এ রকম হাস্যকর সিদ্ধান্ত কিন্তু এবারই প্রথম নয়। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের আগে মুশফিকরা খেলেছিলেন বিপিএল। বিসিবির সেই আয়োজনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন তখন। তবে সমালোচনার হাত থেকে বিসিবি সে সময় বেঁচে গিয়েছিল টাইগারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য। এশিয়া কাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর বিসিবির কর্মকর্তারা জোর গলায় জানিয়েছিলেন, বিপিএলের জন্যই ক্রিকেটাররা আত্দবিশ্বাসী ছিলেন। যার ফল রানার্সআপ। বিসিবি শুধু সেবারই নয়, ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির আগেও বিস্ময় জাগানো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিসিবি। ক্রিকেটাররা ৫০ ওভার ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দুইদিনের প্রিমিয়ার ক্রিকেট খেলে। ম্যাচে এক এক দল ব্যাটিং করত ৮০ ওভার করে।
বিশ্বকাপের আসর বসবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। সেখানকার হার্ড, বাউন্সি উইকেটের সঙ্গে যাতে ক্রিকেটাররা মানিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য দুই সপ্তাহের একটি প্রস্তুতি ক্যাম্প হবে অস্ট্রেলিয়ায়। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত করেছে বিষয়টি। সেখানে স্থানীয় দলগুলোর বিপক্ষে ৫-৬টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মুশফিকরা। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বলতে এটাই। অথচ প্রস্তুতিটা আরও ভালো হতে পারত। বিশ্বকাপের আগে বিপিএলের তৃতীয় আসরের তারিখ দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, 'বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের অর্থ এখনো পরিশোধ হয়নি। সেটা পরিশোধ হওয়ার আগে আরেকটি আসরের তারিখ ঘোষণায় আমি বিস্মিত। এছাড়া বিশ্বকাপের আগে বিপিএল করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাইনি। আমি আরও একটি কথা বলতে চাই, আগের আসরের অর্থ পরিশোধ না হলে কোনো ক্রিকেটারই বিপিএলে অংশ নিবেন না।'
বিপিএলের আগে ক্যালেন্ডারে রয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। ৪, ৫ আগস্ট দলবদল। লিগ শুরু ১০ অক্টোবর। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, প্রিমিয়ার ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে আয়োজন করলে ভালো হতো। তাতে করে ওয়ানডে খেলার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারতেন ক্রিকেটাররা। এ বিষয়ে বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, 'আমরা বিশ্বকাপের আগে দুই সপ্তাহের একটি প্রস্তুতি ক্যাম্প করব অস্ট্রেলিয়ায়। এতে করে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ভালোই হবে বলে মনে করি।' বিশ্বকাপের আগে বিপিএল আয়োজনের বিষয়ে বলেন, 'ক্যালেন্ডারে একটি স্লট রাখতে হবে বলেই বিপিএল রাখা হয়েছে। এ সময় অন্য কোনো খেলারও আয়োজন করা হতে পারে। এমন পরিকল্পনাও রয়েছে বিসিবির।'
তাহলে কি কোনো ওয়ানডে টুর্নামেন্টের আয়োজন করবে বিসিবি সে সময়? এ বিষয়ে বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক কিছু বলেননি। তবে বিপিএলের তারিখ নির্ধারণ করে সমালোচিতই হয়েছে বিসিবি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলবে 'এ' গ্রুপে। আসরে বাংলাদেশের প্রথম খেলা ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া, ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা, ৫ মার্চ স্কটল্যান্ড, ৯ মার্চ ইংল্যান্ড ও ১৩ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।