বিকালের সূর্য তখন অস্তগামী। অফিস ছেড়ে ঘরমুখী হচ্ছে লোকজন। ঠিক তখনই মতিঝিল ক্লাবপাড়া প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে বাদ্য-বাজনার আওয়াজে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ইতিউতি তাকাচ্ছেন আওয়াজের কারণ জানতে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় উপস্থিত সবার কাছে। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফুটবল দল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড ২০১৪-১৫ মৌসুমে বাংলাদেশ পেশাদার লিগের দলবদল করতে আসে চমকে দিয়ে। জাহিদ হাসান এমিলি, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, ওয়ালি ফয়সাল, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসরা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিকালে দলবদল করতে আসেন বাফুফে ভবনে। আসেন আলো ছড়িয়ে জমকালো পরিবেশে। কাল দলবদলে ২৯ ফুটবলারের নাম জমা দেয় শেখ রাসেল। এর মধ্যে দুজন বিদেশি এবং বাকি ২৭ জন বাংলাদেশের, যার মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডের সাত ফুটবলার।
শেখ রাসেলের দায়িত্ব নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। চেয়ারম্যান হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই ক্লাব নতুনভাবে জেগে উঠেছে। এবার শিরোপা জেতার প্রত্যাশা নিয়ে দল গড়েছে শেখ রাসেল। দলটি ২০১২-১৩ মৌসুমে পেশাদার লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ- তিনটি শিরোপা জিতেছিল। এবারও তেমনই টার্গেট। দলের মন্টেনেগ্রিয়ান কোচ দ্রাগান দুকানোভিচ তেমনই ইঙ্গিত দেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, 'আমরা এবার চেষ্টা করব বাংলাদেশ লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে। আমি মনে করি আমরা শক্তিশালী দল গড়েছি। এই দল নিয়ে এমন ফুটবল খেলব, যা বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে অনেক সহায়তা করবে।' দল নিয়ে উচ্চাশা পোষণ করেছেন ডাইরেক্টর-ইন-চার্জ ইসমত জামিল আকন্দ। তিনি বলেন, 'আমাদের ক্লাবটির দায়িত্ব নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়েছি।' আগেভাগে দল গড়ার ব্যাখ্যায় দলটির ডাইরেক্টর-ইন-চার্জ বলেন, 'গত মৌসুমে আমাদের ফলাফল মনঃপূত হয়নি। এবার শিরোপা জেতাই আমাদের টার্গেট। শেখ রাসেলের নামকে আরও শ্রদ্ধাশীল করতে চাই।'
পেশাদার লিগ কবে মাঠে গড়াবে এখনো ঠিক করেনি বাফুফে। তবে আবাহনী, শেখ জামালের মতো শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলো ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে অনুশীলনে। অনুশীলনে নেমে পড়বে শেখ রাসেলও। আজ সব ফুটবলার চলে যাবেন বিকেএসপিতে। সেখানে এএফসি ক্লাবের প্লে অফ ম্যাচকে সামনে রেখে অনুশীলন করবে দলটি। মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের একটি ক্লাবের বিপক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি প্লে অফ খেলবে শেখ রাসেল। প্রতিপক্ষ হিসেবে যথেষ্ট শক্তিশালী তাজিকিস্তানের দলটি। তার পরও জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছেন কোচ দুকানোভিচ। তিনি বলেন, 'তাজিকিস্তানের দলটি যথেষ্ট শক্তিশালী। তার ওপর তাদের দেশে খেলা। কঠিন লড়াই করতে হবে আমাদের। আমরাও প্রস্তুত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য।'
আগের মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩০ জন ফুটবলারকে নিবন্ধন করতে পারত প্রতিটি ক্লাব। এবার তা বাড়িয়ে ৩৩ জন করা হয়েছে। নিবন্ধিত বিদেশি ফুটবলারের সংখ্যা পাঁচ এবং খেলতে পারবেন তিনজন। শেখ রাসেল কাল জমা দিয়েছে দুই বিদেশির নাম। ক্লাবটিতে খেলে যাওয়া সার্বিয়ান ডিফেন্ডার বোজান প্যাটট্রিক। তিনিও দল নিয়ে সন্তুষ্ট, 'দলটির অনুশীলন শুরু হলে শক্তিমত্তা বোঝা যাবে। তবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব।' আরেক বিদেশি নাইজেরিয়ান কিংসলে চিগোজি এনকোওচা। যিনি গত মৌসুমে খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে। দুই বিদেশি ছাড়া আরও তিনজনকে শীঘ্রই দলভুক্ত করবে ক্লাবটি। সেসব ফুটবলার নজরকাড়া ফুটবল খেলবেন বলেই জানান দলটির ডাইরেক্টর-ইন-চার্জ, 'এর আগেও ভালোমানের বিদেশি ফুটবলার এনেছি। এরই মধ্যে দুজন বিদেশি ফুটবলার নিয়েছি। আরও তিন ফুটবলার শীঘ্রই আসবেন। তাদের মান হবে দেশে খেলে যাওয়া যে কোনো বিদেশি ফুটবলারের চেয়ে উন্নত। দেশবাসী তাদের খেলা দেখে আনন্দ পাবেন।'
নতুন মৌসুমের স্কোয়াড
মামুন (মোহামেডান), রাসেল মাহমুদ লিটন (মুক্তিযোদ্ধা), মাসুদ রানা (শেখ রাসেল), রাকিবুল ইসলাম রনি (শেখ রাসেল), আমিনুল ইসলাম (শেখ রাসেল), ওয়ালি ফয়সাল (আবাহনী), রেজাউল করিম (শেখ রাসেল), মো. ইয়াসিন (শেখ জামাল), তপু বর্মণ (মোহামেডান), নজরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম আবাহনী), সোহেল রানা (শেখ রাসেল), আবদুল হামিদ ভাসানী (আবাহনী), মুরাদ হাসান (শেখ রাসেল), শেখ মোহ. আশরাফ হোসেন (মুক্তিযোদ্ধা), জাহিদ হোসেন (মোহামেডান), জামাল হোসেন (আবাহনী), শাহেদুর আলম শাহেদ (আবাহনী), ফজলে রাবি্ব (শেখ রাসেল), আতিকুর রহমান মিশু (আবাহনী), হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস (মোহামেডান), মোখলেসুর রহমান (বিজেএমসি), আবু সুফিয়ান ইউসুফ শিফাত (মোহামেডান), জাহিদ হাসান এমিলি (মোহামেডান), মিঠুন চৌধুরী (শেখ রাসেল), আসাদুজ্জামান বাবলু (ফকিরেরপুল), মো. রকি (ফকিরেরপুল), বোজান প্যাটট্রিক (শেখ রাসেল, সার্বিয়া), কিংসলে চিগোজি এনকোওচা (নাইজেরিয়া)