অ্যাপ ডেভেলপার কেভিন মার্কস এর মতে, আমার ফোন বা ল্যাপটপে ইন্টারনেটে কিছু পড়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। স্ক্রিন একেবারে চোখের কাছে ধরতে ধরতে মনে হচ্ছে, চোখ দুটোই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই জটিল অবস্থায় মেজাজটাই বিগড়ে যেতো। কিন্তু বিরক্তির চূড়ায় নিয়ে গেলো গুগলের অ্যাপ ইঞ্জিন কনসোল। একটি একটি পেজ। ডেভেলপার হিসাবে এর টেক্সটগুলোকে সহজপাঠ্য করে নিতাম। আবার কঠিনও করা যেতো।
এক সময় লেখাগুলো গাঢ় ও সতেজ দেখাতো। কিন্তু হঠাৎ করেই এগুলো হয়ে গেলো ফ্যাকাশে ধূসর রংয়েল। যদিও বয়সের কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে। কিন্তু এই ডিজাইন ট্রেন্ডের কারণে সবারই সমস্যা হবে। ডিজাইন চক্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে লেখা ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মাঝে কনট্রাস্ট কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে পড়া আরো কঠিন হয়ে উঠেছে।
আর এর পেছনে গুগল, অ্যাপল ও টুইটার দায়ী।
টাইপোগ্রাফি খুব কঠিন ডিজাইন নয়। বর্তমানে এটাই সবাইকে তথ্যের বিশাল ভাণ্ডারে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছে। ওয়েবের ক্ষমতাকে হেয় করে দেখার কোনো উপায় নেই। এমনটাই মনে করেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের পরিচালক টিম বার্নার্স-লি। এমনি প্রতিবন্ধীদের বোঝার মতো ডিজাইনও এখান থাকতে হবে।
কিন্তু ওয়েবে যদি এমনভাবে লেখা থাকে যা পড়তে কষ্ট হয়, সে ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষ এখানে প্রবেশ করার উৎসাহ হারাবেন। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য পড়া সবচেয়ে কঠিন হয়ে যায়। আবার যারা নিম্নমানের পর্দায় ইন্টারনেটে প্রবেশ করবেন তাদের জন্যেও সমস্যা যাচ্ছে না। ইন্টারনেটে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, সবাই যেন এখানে প্রবেশ করে লেখাগুলো স্পষ্ট দেখতে পান।
আর তাই ইন্টারনেটে লেখার বিষয়ে একট মৌলিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। যেভাবে লেখা হলে সবাই সহজে পড়তে পারেন। সহজপাঠ্য হতে বাধাপ্রদানকারী অনেক কিছু বদলে ফেলে কঠিন কাজ নয়। কনট্রাস্ট এবং লেখার রং, ব্যাকগ্রাউন্ডের রং ইত্যাদি পরিবর্তন করে একে সহজ করা যায়। ২০০৮ সালে ওয়েব অ্যাকসেসিবিলিটি ইনিশিয়েটিভ নামের একটি গ্রুপ ওয়েব ডেভেলপারদের জন্য দিক নির্দেশনা তৈরি করে। তারা ওয়েবপেজগুলো সহজপাঠ্য করার পদ্ধতির সঙ্গে ডেভেলপারদের পরিচয় ঘটান। এ ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড ও লেখার রংয়ের আনুপাতিক হার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। যদি ব্যাকগ্রাউন্ড ও লেখার রং একই হয় তবে তাদের আনুপাতিক হার হবে ১:১। আর যদি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো লেখা বা বিপরীতটা থাকে তবে আনুপাতিক হার হবে ২১:১। চোখে যাদের সমস্যা রয়েছে তাদের পড়ার যোগ্য করতে এই আনুপাতিক হার অন্তত ৭:১ রাখতে বলা হয়।
গুগল ৭:১ আনুপাতিক হারেই পেজ তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। তবে তারা ৫৪ শতাংশ অপাসিটির কথা বলেন পর্দার ক্ষেত্রে। অ্যাপল এবং গুগল তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী ওয়েব ডিজাইন করে। কিন্তু এদের ডিজাইন সহজপাঠ্যের সীমা প্রায় অতিক্রম করে ফেলেছে।
১৯৮৯ সালে আসল ওয়েব ব্রাউজারটি তৈরি করেছিলেন বার্নার্স-লি। তখন সেখানে পেজ অনেক পরিষ্কার ছিল। সেখানে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো অক্ষর ব্যবহার করা হয়। লিঙ্কগুলো দেওয়া হয় গাঢ় নীল রংয়ে। এই স্টাইলটি নেক্সট মেশিনের ডিফল্ট সিটিং হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে আসে মোজাইক ব্রাউজার। মাডি ব্ল্যাক-অন-গ্রে টাইপের ব্রাউজারটি তখন বেশ জনপ্রিয় হয়। সাদা পেজে কালো লেখার বিষয়টিকে পিছিয়ে দেয় মোজাইক।
১৯৯৬ সালে এইচটিএমএল ৩.২ যখন চালু হয়, তখন তা পেজের ব্যাকগ্রাউন্ড ও লেখার রং পরিবর্তনের বেশ কিছু বাড়তি অপশন রাখে। তখন কয়েক ধরনের ফন্ট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যেন তা ৮-বিট স্ক্রিনে সহজপাঠ্য হয়।
কিন্তু ২৪-বিট স্ক্রিন চলে আসার পর ডিজাইনাররা ঝলমলে রংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
এখন পর্যন্ত কম্পিউটারে ফন্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এদের অধিকাংশ ফন্টই সহজপাঠ্য। ২০০৯ সালে সুযোগ অবাধ করা হয়। ডিজাইনাররা ফন্ট ডাউনলোড করে তা ওয়েবপেজে যুক্ত করতে পারেন। 'ওয়েব-সেফ' ফন্টের সীমাবদ্ধতা আর থাকে না।
এলসিডি প্রযুক্তি আসায় স্ক্রিনগুলো অনেক বেশি রেজ্যুলেশন পেয়েছে। কাজেই অক্ষর অনেক ফ্যাশনেবল করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অ্যাপল এই ট্রেন্ডকে উস্কে দেয় হেলভেশিয়া নিউয়ি আল্ট্রালাইট ডিজাইনের মাধ্যমে। এটা ২০১৩ সালের সিস্টেম ফন্টের মতো করেই তৈরি করা হয়। তখন অ্যাপল মোটা অক্ষরও যুক্ত করে।
কেভিন মনে করেন, ডিজাইনার ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের টাইপোগ্রাফির নীতিমালায় ফেরত যাওয়া উচিত। ধূসর ফন্টের চেয়ে কালো ফন্টেই ফেরত যাওয়া উচিত। এতে করে যারা ছোট পর্দায় দেখছেন তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। চোখে সমস্যা থাকলে বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যেও হবে সুবিধাজনক।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ অক্টোবর, ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন