স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড বিশ্বনাথ শাখায় গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যাংকটির সাবেক দুই কর্মকর্তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বজলুর রহমান তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
জেলহাজতে যাওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিশ্বনাথ এসএমই/কৃষি শাখার সাবেক ক্যাশ ইনচার্জ সালাহ উদ্দিন আহমদ ও সাবেক সেকেন্ড অফিসার রাকিব আহমদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা জজ কোর্টের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুল ইসলাম।
তিনি জানান, দুদকের মামলায় আসামিরা হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন। জামিন শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচারক রনজিত কুমার কর্মকার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার তিন কর্মকর্তা ও দুই গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। বিশ্বনাথ থানায় ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর মামলাটি করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে গ্রাহকের এক কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড বিশ্বনাথ এসএমই/কৃষি শাখার সাবেক ম্যানেজার হোসেন আহমদ, সাবেক ক্যাশ ইনচার্জ সালাহউদ্দিন আহমদ, সাবেক কর্মকর্তা রাকিব আহমদ, ব্যাংকের গ্রাহক মাহমুদুল কায়েস ও মোয়াজ্জেম হোসেন বিশ্বাস।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার গ্রাহক লিয়াকত আলীর সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ৩৫ লাখ টাকা এবং ২৩ ডিসেম্বর আলেয়া বেগমের হিসাব থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ওই টাকা আসামি মাহমুদুল কয়েসের সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করে তারা আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি ব্যাংকের গ্রাহক শাহ আলম রাজার দুটি এফডিআর থেকে এক কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৩ টাকা এবং ১০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৩ টাকা অননুমোদিতভাবে এফডিআর-এর মূল ইন্সটলমেন্ট ছাড়াই নগদায়ন করে তার (শাহ আলম) সঞ্চয়ী হিসাবে জমা করা হয়। ওই তারিখেই জমাকৃত টাকার মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা লিয়াকত আলীর হিসাবে, সাড়ে ১২ লাখ টাকা আলেয়া বেগমের হিসাবে এবং ৫৫ লাখ টাকা মুয়াজ্জেম হোসেন বিশ্বাসের হিসাবে জমা করা হয়। অবশিষ্ট ১১ লাখ ১ হাজার ৫৩৬ টাকা শাহ আলম রাজার সঞ্চয়ী হিসাবে জমা থাকে।
পূর্বে লিয়াকত আলী এবং আলেয়া বেগমের দুটি হিসাব থেকে যে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, তা শাহ আলম রাজার হিসাব থেকে ফেরত দেওয়া হয়। অন্যদিকে মুয়াজ্জেম হোসেন বিশ্বাসের হিসাবে জমা হওয়া ৫৫ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। ব্যাংকের ম্যানেজার হোসেন আহমদ ও কর্মকর্তা রাকিব আহমদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে শাহ আলম রাজার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ৫৫ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সবমিলিয়ে শাহ আলম রাজার দুটি এফডিআর নগদায়ন করে এক কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ওই পাঁচ আসামি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এক কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের ঘটনার মামলার চার্জশিট গেল বছরের ১১ জুলাই অনুমোদন করে দুদক প্রধান কার্যালয়। চার্জশিটে ওই পাঁচ আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন দুদক জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহমদ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন