সিলেটের রাজনীতিতে টিলাগড় বহুল আলোচিত-সমালোচিত। স্পষ্ট করে বললে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে টিলাগড়কেন্দ্রীক শক্তিশালী বলয় আছে। এসব বলয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা কারণে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে টিলাগড়ে। সিলেটে তাই টিলাগড় ‘কিলিং জোন’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিলাগড়কেন্দ্রীক রাজনীতির কোন্দল আর বিরোধে খুন হয়েছেন ৮ ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মী।
টিলাগড়ে সর্বশেষ খুনের ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। শিবগঞ্জ সাদীপুরের দীপক দে’র ছেলে অভিষেক দে দ্বীপ (১৮) খুন হন ওই রাতে। তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। সরস্বতী পূজার ‘আয়-ব্যয়ের’ টাকা নিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজনের সাথে দ্বন্দ্ব চলছিল দ্বীপের। গত ৩০ জানুয়ারি এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
তার জেরে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকায় দ্বীপের ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত রায়, সৌরভসহ ৩-৪ জন মিলে দ্বীপকে ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। হামলার সময় দ্বীপের সাথে তার বন্ধু শুভ কর ছিলেন। ওই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিও হয়। দ্বীপ ও শুভ মিলে হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বিরোধে ২০১০ সালের ১২ জুলাই এমসি কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ খুন হন টিলাগড়ে। এরপর বেশ কিছুদিন টিলাগড় শান্ত ছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ফের খুনের ঘটনা ঘটে টিলাগড়ে। ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর টিলাগড়ে ছোট ভাইকে জিম্মি করে ‘সুরমা গ্রুপে’র ছাত্রলীগ কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুমকে শিবগঞ্জে ডেকে এনে খুন করা হয়। খুনের মামলার আসামি হন টিলাগড়কেন্দ্রীক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর টিলাগড়ে খুন ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ। এ খুনের পর ১৮ অক্টোবর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এখন অবধি আর নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি টিলাগড়ে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান।
জানা গেছে, টিলাগড়ে খুনের রাজনীতির শুরুটা ২০০৩ সালে। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আকবর সুলতানকে খুন করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা মিজান কামালীকে একই বছরের ৯ অক্টোবর খুন করা হয়।
সূত্রমতে, শুধু খুনের ঘটনাই নয়, টিলাগড়কেন্দ্রীক রাজনীতির দ্বন্দ্বে প্রায় সময়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজে। ‘শিবির হটাতে’ ঐতিহ্যের স্মারক এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার সাথেও টিলাগড়কেন্দ্রীক আওয়ামী বলয়ের নেতাকর্মীদের নাম জড়িত।
ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, টিলাগড় ছাত্রলীগের জন্য ‘ডেঞ্জার জোনে’ পরিণত হয়েছে। গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ না হলে এখানে আরো খুনোখুনি ঘটতে পারে। সিলেটে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা দ্রুত শক্তিশালী কমিটি গঠন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল