পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর আলামত নষ্ট করতে পাল্টে ফেলা হয় রায়হান আহমদের পরনের কাপড়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার পরনে নীল রঙের টি-শার্ট ও প্যান্ট ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর তার পরনে দেখা গেছে লাল রঙের শার্ট। পাল্টে ফেলা হয় প্যান্টও। নিজের শরীরের চেয়ে অনেক ছোট একটি প্যান্ট ছিল রায়হানের পরনে। রায়হান হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করতেই তার পরনের কাপড় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার মা সালমা বেগম।
শনিবার দুপুরে নগরীর নেহারিপাড়াস্থ বাসায় বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ করেন রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম।
তিনি বলেন, ‘রায়হানের কাপড় কারা, কেন পরিবর্তন করলো? এর সাথে কারা জড়িত? মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এগুলো চিহ্নিত হওয়া দরকার। আটকের পর আকবর তাকে পলায়নে সহায়তা ও পরামর্শদাতা হিসেবে একজন সিনিয়র অফিসারের কথা বলেছে। সেই সিনিয়র অফিসার কে? পরনে কাপড় পরিবর্তন করে আলামত নষ্টকারী ও পালাতে সহায়তাকারী সিনিয়র অফিসারের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। রায়হান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
মামলার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রায়হানের মা বলেন, ‘হত্যা মামলায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া চার পুলিশ সদস্যের কেউই আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি। এতে মামলার ভবিষ্যত নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
সালমা বেগম বলেন, ‘মামলার তদন্ত নিয়ে আমি সন্দেহ পোষণ করি না। কারণ পুলিশের তৎপরতার কারণেই আমার ছেলে হত্যার মূল অভিযুক্ত পলাতক থাকা এসআই আকবর গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু আমার নিরাপরাধ ছেলেকে কারা, কি জন্য মেরেছে এ বিষয়টি এখনও বেরিয়ে আসেনি। এএসআই আশেক এলাহিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেওয়ায় মামলার সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত’।
তবে মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান রায়হানের মা। সেই সঙ্গে খাসিয়া সম্প্রদায়সহ সীমান্ত এলাকার লোকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক ও এলাকার লোকজনসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ রায়হানের পরিবারের পাশে থাকায় তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের আহ্বায়ক সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিলেটসহ গোটা দেশবাসী হতবাক। তদন্তে অবহেলা বা অন্য কোন কারণে রায়হান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কেউ পার পেয়ে গেলে সিলেটবাসী কাউকে ক্ষমা করবে না। রায়হান হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, রায়হান হত্যার ঘটনায় আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি না দিলেও প্রত্যক্ষদর্শী তিন পুলিশ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে কারণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন