দুর্ভোগের আরেক দিন কাটাচ্ছেন সিলেটের বাসিন্দারা। বন্ধ পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদের ডাকে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিভাগজুড়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের ধর্মঘট। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোগান্তির দ্বিতীয় দিন পার করছেন এই অঞ্চলের মানুষসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আগত পর্যটকরা।
বুধবার সকালে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকেরা সিলেটের প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান করছেন। এ সময় সড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলো আটকাতেও দেখা গেছে তাদের। নগররীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ থাকায় সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেলেও অন্যান্য যানবাহন তেমন দেখা যায়নি।
সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল জানান, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে আমরা বরাবরের মতো আমাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরেছিলাম। পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন নয়, শ্রমিকদের মাধ্যমে আমরা পাথর উত্তোলন করতে চাই জানালেও বৈঠকে কোনও সমাধান আসেনি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের মতামত বা দাবিকে গুরুত্ব দেননি। তাই আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। টানা তিন দিন পুরো সিলেট বিভাগে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশ যাত্রী, ফায়ার সার্ভিস, সংবাদপত্র ও জরুরি ওষুধ বহনকারী গাড়ি ধর্মঘটের আওতায় থাকবে না।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বাস মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে নেই। তবে বাসের শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে পরিবহন ধর্মঘট চালানো হচ্ছে। শ্রমিকরা না থাকলে আমরাতো বাস চালাতে পারি না। তিনি জানান, সিলেট থেকে কোনও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি ও প্রবেশ করেনি।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। ট্রেনও সিডিউল অনুযায়ী চলবে বলে জানান তিনি।
সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ গত সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট চলবে। ধর্মঘটে সিলেট বিভাগের বাস, ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কোচ, লেগুনা, ট্যাংকলরি, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী, ফায়ার সার্ভিস, সংবাদপত্র ও জরুরি ওষুধ সরবরাহের গাড়ি ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে। ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে পাথর আহরণ, বিক্রয়, বিপণনসহ এই খাতসংশ্লিষ্ট সব অংশীদারকে নিয়ে গঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
পাথর কোয়ারিগুলো থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরণের অনুমতির দাবিতে প্রায় তিন মাস ধরে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ৩ ডিসেম্বর সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়। এতে কোনো সাড়া না পেয়ে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৯ ডিসেম্বর সিলেট জেলায় পণ্যবাহী পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করা হয়। এ কর্মসূচি পালনের পরও দাবি আদায় না হওয়ায় সিলেট বিভাগে গণপরিবহনে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল