ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা ইয়াসমিন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এক মেয়ের জননী সেলিনা ইয়াসমিন মৃত্যুর আগে ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে সিলেটের সর্বত্র ঝড় উঠেছে। সেই তিন ব্যক্তি কারা? যাদেরকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে মনের কষ্টের কথা লিখে দুশ্চিন্তা আর হতাশাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এদিকে সেলিনা ইয়াসমিনের দেয়া ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে কাজ করছে পুলিশের একটি দল। ইতোমধ্যে পুলিশ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। পুলিশের তদন্তে কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে। তবে প্রাপ্ততথ্যগুলো প্রাথমিক হওয়াতে সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। এদিকে, সেলিনা ইয়াসমিনের মৃত্যুতে শোক ছুঁয়েছে পুরো ফেঞ্চুগঞ্চ উপজেলায়। শোক ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে মৃত্যুর পূর্বে ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস। যে স্ট্যাটাসে তিনি তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন তিনজনকে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর ফেঞ্চুগঞ্জ জুড়ে এখন একটাই আলোচনা-কারা সেই তিন ব্যক্তি।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও এক প্রকৌশলীসহ তিনজনকে। তবে পুরো বিষয়টি খোলাসা হতে সময় লাগবে। কারণ বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে গেছে। পুলিশ ধারণা করছে, ওই তিনজনকে ইঙ্গিত করেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেলিনা ইয়াসমিন। তবে তার দাফন শেষ হওয়ার পর সেই তিন ব্যক্তির তথ্য সেলিনা ইয়াসমিনের মেয়ে সেঁজুতির কাছ থেকে জানতে চাইবে পুলিশ।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি সাফায়েত হোসেন বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা ইয়াসমিন মৃত্যুর আগে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি তিন ব্যক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। পুরো বিষয়টি খোলাসা না করলেও তিনি সবতথ্য তার মেয়ের কাছে রয়েছে বলে ফেসবুকে লিখেন। পুলিশ এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সেলিনা ইয়াসমিনের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর পুলিশ তার মেয়ের সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে তথ্য জানতে চাইবে।
জানা যায়, ৫ ডিসেম্বর স্ট্রোক করেন সেলিনা ইয়াসমিন। অসুস্থ হবার আগে ওইদিনই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেলিনা ইয়াসমিন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে বলেন-‘যদি আমার শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো ক্ষতি হয়, তার জন্য মাত্র তিনজন মানুষ দায়ী থাকবে। সমস্ত প্রমাণ আমার মেয়ের কাছে আছে। যথোপযুক্ত সময়ে আমার মেয়ে তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবে। মনে রাখবেন শুধু তিনজন মানুষ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমার ও আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন।’
ফেসবুকে এটিই ছিলো তার শেষ স্ট্যাটাস। এর পরদিন তিনি সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেলিনা ইয়াসির ইয়ামিন নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী। স্বামীর সাথে সম্পর্কে বনিবনা না হলে সেঁজুতি নামের মেয়েকে নিয়ে একলা জীবন পার করছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৪০ বছর। সেলিনা ইয়াসমিন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাদে দেইলি ঘিলাছড়া গ্রামের মৃত তাহির আহমদের মেয়ে ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরফান আলীর নাতনি।
এদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর ফেঞ্চুগঞ্জের সুশীল সমাজসহ নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়রা পোস্টটি নিজেদের টাইমলাইনে শেয়ার করে তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা ইয়াসমিনকে তার মৃত্যুর আগে শারীরিক, মানসিক অত্যাচার করা সেই তিন ব্যক্তি কারা?
বিডি-প্রতিদিন/শফিক