দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাহিরে থাকা বিএনপির সিলেটের সাংগঠনিক জোনে বন্ধ হচ্ছে না গ্রুপিং। বরং, বিদায়ী বছরের শেষ মুহূর্তে সিলেট বিএনপির গ্রুপিং চলে এসেছে রাজপথে। বিজয় দিবসে সিলেটে বিএনপির বিবাদমান দুই গ্রুপ রাজপথে জানান দিয়েছে নিজেদের অস্তিত্বের। বিজয় র্যালীতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা করেছেন সিলেটে। এক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে, এর মাত্র ৫ দিনের মাথায় তিনি মোড় ঘুরিয়েছেন রাজনীতিতে।স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির নানা কর্মসূচি পালনের জন্য গঠিত সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহবায়কের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এতে করে আবারো সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে বেশ আলোচনায় নাম এসেছে আরিফুল হকের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির ২৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটি গঠনের পর নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একভাগে ১৬ জন ও অপর ভাগে ৯ জন নেতা অবস্থান নেন। এই ৯ নেতার নেতৃত্বে রয়েছেন কমিটির বাহিরে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
উপজেলা কমিটি : চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি কমিটিতে একজন আহবায়ক ও ২৪ জনকে সদস্য করে মোট ২৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি গঠনের আগে জেলা বিএনপির বিবাদমান দু’পক্ষই অসংখ্য বার বৈঠকে বসে। এমনকি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সিলেটে এসে দুই পক্ষকে নিয়েও বৈঠক করেন। কিন্তু উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর বেকে বসেন জেলা বিএনপির ৯ নেতা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৮টি কমিটিতে আরও ৬ জন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তারপরও মনতুষ্ট হয়নি একাংশের নেতাদের। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপির ৯ জন নেতা নানা অভিযোগ তুলেছেন জেলা আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারে বিরুদ্ধে। তবে, তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সম্মেলন বানচাল করতে এসব করা হচ্ছে।
বিজয় দিবসের র্যালিতে দুই পক্ষের শোডাউন: গত ১৬ই ডিসেম্বর সিলেটের রাজপথে বিএনপির দুই পক্ষ্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপলাভ করেছে। জেলা ও মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বিশাল শোডাউন করেছেন। অপরদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ওই দিন বড় শোডাউন করেছেন। মূলত, এই বড় বড় শোডাউনের পেছনের রহস্য ছিল আরিফ-মুক্তাদিরের নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়া। বিজয় দিবসের শোভাযাত্রার পরবর্তী ৫ দিন সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে আরিফ-মুক্তাদিরের শোডাউন ছিল নেতাকর্মীদের মুখেমুখে। একপর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে লেখালেখিও করেন। এর ঠিক ৫ দিনের মাথায় রাজনীতিতে অনেকটা মোড় ঘুরিয়ে ফেলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ২২ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির নানা কর্মসূচী পালনের জন্য গঠিত সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহবায়কের পদ বাগিয়ে নেন তিনি (মেয়র আরিফ)।
মহানগর বিএনপি : সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। মহানগরের নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে ভাঙবে তাদের কমিটি। করোনা মহামারীর শুরুতেই জেলা বিএনপির দুই পক্ষই ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেলেও মহানগরের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ত্রাণ তৎপরতায় দেখা যায়নি। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানান, দলে কোন গ্রুপিং নেই। তবে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কারণ বিএনপি একটি বড় দল। গ্রুপিংয়ের কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, দুই দিন আগে ফেঞ্চুগঞ্জ বিএনপির সভায় জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে গ্রুপিং আর থাকলো কই?
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা