জেলার একমাত্র প্রধান চিকিৎসালয় ‘হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপতাল’। হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যার হলেও বাস্তবে ১শত শয্যার জনবলও নেই বললে চলে। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংকটও। কোনরকম জোড়াতালি দিয়েই চলছে এই হাসপাতালটি। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার সাধারণ জনগণ।
জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালটি বর্তমানে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ৭ তলা ভবন। সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল। নাম মাত্র আধুনিক হলেও এতে মোটেও নেই আধুনিকতার ছোঁয়া।
এদিকে, হাসপাতালের অধিকাংশ ভবনই এখন মেডিকেল কলেজ এর অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাধারণ রোগীরা বলছেন, কাগজে কলমে শয্যা সংখ্যা বাড়লেও কমেছে সেবার মান। বাস্তবে শয্যাসংখ্যা ২শও হবে না। দীর্ঘদিন ধরে নেই বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, শূণ্য বহু নার্স ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পদ। চিকিৎসকের ৩৭ পদের মধ্যে খালি পড়ে আছে ১৩টি। নার্সের ১৪০ পদের মধ্যে ৫৫টিই শূন্য। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদও ৩১টি শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুটি এক্সরে মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বিকল রয়েছে একটি। নেই এনআইসিইউ ও আইসিইউ। স্ক্যানু ওয়ার্ডে ১১টি ওয়ার্মার থাকলেও সচল মাত্র ৭টি। একেকটি ওয়ার্মারে ১টি বাচ্চা রাখার কথা থাকলেও এতে রাখা হয় ৪ জন করে। ১টি মাত্র ইনকিউবেটর, তাও প্রায় সময়ই থাকে অচল। দুটি ফটোথেরাপি থাকলেও সচল মাত্র ১টি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনে স্ক্যানুতে মারা গেছে ২৩ নবজাতক। এর বাইরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মারা গেছে আরও একজন নবজাতক।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চরহামুয়া গ্রাম থেকে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নুরজাহান নামে এক রোগী অভিযোগ করে জানান, তিনি এক্সরে রুমে গেলে তাকে বলা হয় মেশিন নষ্ট। এ সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে এক্সরে করার পরামর্শও দেয়া হয় তাকে। শায়েস্তাগঞ্জের কলিম নগর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা খাতুন তার নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালের স্ক্যানু ওয়ার্ডে গেলেও ওয়ার্মার মেশিন সংকটের কারণে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
পৌর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিযুষ চক্রবর্তী জানান, হবিগঞ্জ জেলা সদরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হয়েছে। হাসপাতালও ২ শত ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তারপরও এভাবে নবজাতকের মৃত্যু কাম্য নয়। নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে এনআইসিইউর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। এখানে বিভিন্ন এলাকার রোগী আসেন। কিন্তু যদি চিকিৎসা সুবিধা না বাড়ানো হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়। এর আগে এখানে আইসিইউ ও পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার কথা থাকলেও আমরা এর দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখছি না। পিসিআর ল্যাব না করায় নিয়োগ প্রাপ্ত জনবল অলস সময় পার করছেন।
হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হেলাল উদ্দিন জানান, এখন নিয়মিত দু’জন ডাক্তার দায়িত্বে থাকেন। পূর্বে তাও ছিল না। পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করছে এনজিও সংস্থা মা-মনি। যন্ত্রপাতির সমস্যা নিয়েও আমরা কাজ করছি। শিশু ওয়ার্ড ও স্ক্যানুকে সক্রিয় রাখতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা