সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উন্নয়নের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় সরকারের দিকে। কারণ, সিসিকের নিজস্ব আয় সীমিত। প্রতি বছর রাজস্ব খাত থেকে যে আয় আসে, তা থেকে উন্নয়নকাজে খুব বেশি ব্যয়ের সুযোগ তারা পায় না। এবার এই আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এজন্য নগরীর ২০ হাজারেরও বেশি বাসাবাড়িকে গৃহকরের (হোল্ডিং ট্যাক্স) আওতায় আনার পরিকল্পনা হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সিসিকে আয় বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়বে।
সিসিকের রাজস্ব শাখা সূত্র জানিয়েছে, দ্য মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) রুলস ১৯৮৬ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক ভবন, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসাবাড়ি অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট (জরিপ) করতে হবে।
কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশন সেই ২০০৬-০৭ অর্থবছরের পর আর কোনো জরিপ করেনি। ওই সময় সিসিকের তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের উদ্যোগে মাঠ জরিপ হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিসিকের অভ্যন্তরীণ ব্যয় ও উন্নয়ন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছেই। কিন্তু আয় না বাড়ায় চাপের মুখে পড়ে সিসিক। এর ওপর সরকারি তরফেও নতুন করে গৃহ জরিপ করে কর আরোপের চাপ বাড়ছিল। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে বাসাবাড়ির জরিপকাজ শুরু করে সিসিক। প্রায় দেড় বছর সময় নিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
যেমনটি বলছিলেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ‘নিয়ম হচ্ছে, পাঁচ বছর পর পর গৃহ জরিপ করতে হবে। সারাদেশের সিটি করপোরেশনগুলো কিন্তু তা-ই করে। কিন্তু আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নাগরিকদের উপর চাপ বাড়াতে চাইনি। তাই জরিপও করা হয়নি। প্রায় এক যুগ গৃহ জরিপ না হওয়ায় সরকারি পর্যায় থেকে চাপ বাড়ছিল। আমাকে বলা হয়েছে যে, আমি কেন জরিপ করিনি। বাধ্য হয়ে আমরা জরিপ করেছি।’
সিসিক সূত্র জানায়, নতুন জরিপ অনুসারে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসাবাড়ির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৪৩০টি। ২০০৬-০৭ অর্থবছরের জরিপে বাসাবাড়ির সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৮০০টি। এসব বাসাবাড়ি থেকে নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করছে সিসিক। এবার এগুলোর সঙ্গে নতুন বাসাবাড়ি (হোল্ডিং) যুক্ত হবে ২০ হাজার ৬৩০টি। এই নতুন হোল্ডিং থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে আদর্শ কর তপশীলে গৃহকর ৭ শতাংশ, করজারভেন্সি ৭ শতাংশ, আলো ও পানি কর ৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য কর ৮ শতাংশ হারে মোট ২৮ শতাংশ কর দেওয়ার কথা। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন নাগরিকদের উপর চাপ কমাতে ৮ শতাংশ কর বাদ দিয়ে ২০ শতাংশ হারে কর আদায় করছে বলে জানিয়েছেন এর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান।
সিসিক মেয়র আরিফ জানান, নতুন জরিপে বাণিজ্যিক গৃহের জন্য প্রতি ফুটে ৮ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। অবাণিজ্যিক গৃহের জন্য প্রতি ফুটে ৫ টাকা। এছাড়া টিনশেডের গৃহের জন্য ফুটপ্রতি ৩ টাকা।
আরিফ বলেন, ‘আমরা এটা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে নির্ধারণ করেছি। তারা কিন্তু ২০১৮ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে করের পরিমাণ অনেক বাড়িয়েছে। কিন্তু আমরা নগরবাসীর উপর বাড়তি করের চাপ দিতে চাই না। এজন্য ২০১১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসেবে এখন নগরীতে গৃহ কর বাবদ ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৪৪৫ টাকা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কর নির্ধারণ করতাম, তাহলে এই টাকার পরিমাণ হতো প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। মূলত করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য আগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কম পরিমাণ কর নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সিসিক মেয়র জানান, স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ৮২ ধারা অনুসারে দেশের সকল সিটি করপোরেশনকে কর আরোপের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়।
এদিকে, নতুন গৃহকর আরোপের বিষয়ে মতামত নিতে সিলেটে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ, সাংবাদিকবৃন্দের সাথে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা করছে সিসিক। কেউ কেউ এখন কর আরোপ না করতে আহবান জানাচ্ছেন। সভা থেকে প্রাপ্ত মতামতগুলো লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব মতামত পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফ।
তিনি বলেন, ‘সবার মতামত আমরা নিচ্ছি। আমরা কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না। আইন অনুসারে সব করছি। পরের ধাপে আমরা সিসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতামত নেব। সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে, আইন অনুসারে আমরা কর কবে থেকে আদায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেব।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন