চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি বিএনপি। কিন্তু দল নির্বাচন বয়কট করলেও স্থানীয় নেতারা বসে নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে স্বতন্ত্রের ব্যানারে তারা অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনে।
সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচন নিয়ে নিরব থাকলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শামিল হচ্ছেন ভোট উৎসবে। স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে তারা কাজ করছেন উৎসবের আমেজে। গেল দুই ধাপের নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন ইউনিয়নে ভালো ফলাফলও করেছেন বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সিলেটের তিন উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্রের ব্যানারে অংশ নেয়া বিএনপির প্রার্থীদের জয় ছিল প্রায় সমানে সমান। নির্বাচনে ৬টিতে নৌকা প্রতীকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও ৫টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে অংশ নেয়া বিএনপি নেতারা বিজয়ী হন। বাকি চারটির মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং একটিতে জামায়াত ও একটিতে খেলাফত মজলিস বিজয়ী হয়।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফল দেখে আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ধাপের নির্বাচন নিয়ে আরো আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। আগামী ২৮ নভেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাট, দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুর উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা।
প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে বিএনপি নেতারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় প্রতীক ছাড়াই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আশাতীত ফল করায় এবার আরো জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে গোল দিতে নারাজ তারা। দলীয় অবস্থানের কারণে জেলা বিএনপির পদবীধারী নেতারা পারছেন না প্রকাশ্যে মাঠে নামতে। ফলে নিরব ভূমিকা পালন করছেন তারা।
তবে দল অংশ না নিলেও নেতাকর্মীদের তারা কোনভাবেই নির্বাচনে নিরোৎসাহিত করছেন না। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিজয় নিশ্চিতে নিজেদের প্রার্থীদের নিয়ে নানা কৌশল আঁটছেন। গেল দুই দফা নির্বাচনে যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন কেন্দ্র থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন প্রকাশ্যে কাজ করতে দ্বিধা করছেন না নেতাকর্মীরা।
সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগকে মাঠ খালি করে দিতে নারাজ বিএনপি। কেন্দ্র থেকেও এ ব্যাপারে কঠোর কোন নির্দেশনা না আসায় মাঠের নেতাকর্মীদের নির্বাচন নিয়ে নিরোৎসাহিত করা হচ্ছে না। যারা প্রার্থী হচ্ছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য গোপনে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যেসব ইউনিয়নে স্বতন্ত্রের ব্যানারে অংশ নেয়া দলের প্রার্থীর অবস্থা সুবিধাজনক আছে, সেসব প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সিলেটের ৩ উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার ৫ ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ১০ জন। তারা হলেন- জৈন্তাপুর ইউনিয়নে আব্দুল আহাদ ও আলমগীর হোসেন, চারিকাটায় শাহ আলম চৌধুরী, আলতাফ হোসেন বিলাল ও হেলাল উদ্দিন, দরবস্তে বাহারুল ইসলাম বাহার ও খায়রুল কবির, ফতেহপুরে আব্দুর রশিদ এবং চিকনাগুলে এবিএম জাকারিয়া।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী আছেন ৬ জন। তারা হলেন- রুস্তমপুরে শাহাব উদ্দিন শিহাব ও আবুল কালাম আজাদ, ফতেহপুরে মিনহাজ উদ্দিন, লেঙ্গুরায় গোলাম কিবরিয়া সাত্তার, নন্দিরগাঁওয়ে মামুনুর রশীদ মামুন ও তোয়াকুলে খালেদ আহমদ। দক্ষিণ সুরমার ৫ ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির চার নেতা। তারা হচ্ছেন- সিলামে আত্তর আলী ও ফয়জুল হক, লালাবাজারে আমিনুর রহমান শিফতা ও মোগলাবাজারে ময়নুল ইসলাম মঞ্জু।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল বলেন, ‘বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দলের যেসব নেতারা নির্বাচন করছেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের সাথে দলের কোন সম্পর্ক নেই।’
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন