আগের তিন ধাপের মতো চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সিলেটে ভরাডুবি ঘটেছে নৌকার। দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ৭টিতে। দুই ইউনিয়নে জামানতও হারিয়েছেন নৌকার প্রার্থী। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী পরিবর্তন, বিদ্রোহীদের দাপট ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়নি বিএনপি। স্বতন্ত্রের ছদ্মবেশে প্রার্থী ছিল বিএনপি ও জামায়াত। এই অবস্থায় সিলেটের প্রতিটি উপজেলায় ভাল ফলাফল প্রত্যাশা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ফলাফল হচ্ছে উল্টো। দু’একটি উপজেলা ছাড়া বেশিরভাগেই দলীয় প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিদ্রোহীরা দেখিয়েছেন দাপট। আর সর্বশেষ গত রবিবার গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিদ্রোহীদের সাথে দাপট দেখিয়েছে জামায়াতও।
দুই উপজেলার ২০ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৭টিতে জয়ী হয়েছে নৌকা। আর বাকি ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে স্বতন্ত্রের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৪টিতে, বিএনপি ৩টিতে ও জামায়াত ৪টিতে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির একজন ও এক প্রবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এর মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বতন্ত্রের ব্যানারে জামায়াত পাশ করেছে দুই ইউনিয়নে।
এই উপজেলায় নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসেবে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী পরিবর্তনকে দায়ী করছেন দলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী হিসেবে কেন্দ্রে যাদের নাম প্রেরণ করা হয়েছিল সেখান থেকে ৩ ইউনিয়নের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। ফলাফলও হয় উল্টো। দুবাগ, তিলপাড়া ও মোল্লাপুর ইউনিয়নে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী বদল করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। তিন ইউনিয়নেই নৌকার পরাজয় ঘটে। এছাড়া দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নির্বাচন করা দুই বিদ্রোহীও নৌকা ডুবিয়ে নিজেদের জয় নিশ্চিত করেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গ্রুপিংয়ের কারণে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই বিভক্ত। নির্বাচনেও নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি। এছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ও কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী পরিবর্তনের কারণে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান ও দেওয়ান মকসুদুল ইসলাম আউয়ালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউই ফোন ধরেননি। এদিকে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বাকি ৬টির মধ্যে লক্ষ্মণাবন্দ ও লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। লক্ষ্মীপাশায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাত্র ৩৪৬ ভোট পেয়ে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ নম্বর হয়েছেন।
আর লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবদুল করিম খান মাত্র ১৩৯ ভোট পেয়ে ফলাফলের দিক দিয়ে তলানিতে ছিলেন। এর মধ্যে পূর্ব ফুলসাইন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন মাত্র ২ ভোট! গোলাপগঞ্জের দুটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুইটিতে জামায়াত, ১টিতে জাতীয় পার্টি ও ১টিতে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আরও দু’একটা ইউনিয়নে আমরা নৌকার বিজয় আশা করেছিলাম। বিশেষ করে বাদেপাশা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে নানা হিসেব-নিকেশের কারণে দলীয় প্রার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফল করতে পারেননি।
এছাড়া দলীয় প্রতীকে না হলেও উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে খুবই সক্রিয় ছিল। তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করেছেন। লক্ষ্মনাবন্দ ও ঢাকাদক্ষিণে ভাল প্রার্থী দেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে ওই দুই ইউনিয়নেও দলীয় প্রতীকে ভাল করতে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।’
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর