৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে চা শ্রমিকরা। সকাল থেকেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা বাগানগুলোতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ শ্রমিকরা। উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুড়িয়া ও সাতগাঁত্ত চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও পরে আবার তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। এদিকে সকালে কালিঘাট চা বাগানে শ্রমিকদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ।
দেশের চা বাগানগুলোতে শ্রম অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত রবিবার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসকের এক বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এই বৈঠকে আসন্ন দুর্গা পূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার শর্তে পূর্বের মজুরি ১২০ টাকা রেখেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দানে সম্মত হন। এ সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিতে শ্রমিকরা স্বাক্ষর করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাজে যোগ না দিয়ে ফুলছড়া, কাকিয়াছড়া, বালিশিরা ও কালিঘাট চা বাগানের শ্রমিকরা বাগানে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানে আসেন। পথে বিটিআরআই চৌমুহনার শ্রমিকরা প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা সেই বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান। যতই সময় বাড়তে থাকে তাদের মিছিল ততই দীর্ঘ হতে থাকে। এদিকে দুপুরে সাতগাঁত্ত, আমরাইলছদা, গান্ধিছড়া, মকিড়িছড়া, ইছামতি চা বাগানের শ্রমিকরা লছনা চৌমুহনা অবরোধ করে। পরে তিন ঘণ্টা পর সেই অবরোধ তুলে নেয়। উপজেলা অনান্য বাগানগুলোতেও শ্রমিকদের কাজ যোগ না দিয়ে নাটমন্দিরে বসে থাকতে দেখা যায়।
আন্দোলনে কোন কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা যায়নি। অধিকাংশ নেতার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। আর যাদের খোলা রয়েছে তারাও কল ধরছেন না।
কালিঘাট চা বাগানের রঞ্জিতা তাঁতি বলেন, নেতারা আমাদের ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলনে নামিয়েছে। আমরা নয় দিন ধরে আন্দোলন করছি। এখর তারা কয় টাকায় বিক্রি হয়ে ১২০ টাকা মজুরি মেনে নিল। আমরা ১২০ টাকা মজুরি মানি না।
কানেশ তাঁতি বলেন, নেতাদের কি লজ্জা-শরম নাই! আমাদের ১২০ টাকায় কাজ করার জন্য বলে। আমরা না খেয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের এই রুটি রুজির সংগ্রাম চলবে। ১২০ টাকায় আমরা সংসার চালাতে পারি না।
সিলেট ভ্যালির সভাপতি বলেন, তার ভ্যালিতে ২৪টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি খোলা রয়েছে। কিছু বাগানে ছুটি দেয়া হয়েছে। আর বাকিগুলোতে কাজ বন্ধ রয়েছে।
মনু-ধলই ভ্যালির সহ-সভাপতি গায়ত্রী রাজভর বলেন, আমাদের ভ্যালিতে ২৩টি বাগানের মধ্য ২/৩টি খোলা আছে। বাকি বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলনে আছেন।
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার বলেন, লস্করপুর ভ্যালিতে ২৩টি বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল বলেন, আমরাতো ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতেই আছি। শ্রমিকদের এখন পূর্বের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরে তাদের মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন। কিন্তু শ্রমিকরা এই কথা মানছে না। তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকে চা শ্রমিকরা এই আন্দোলন শুরু করেছিল। এর আগে সরকার ও মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের শ্রীমঙ্গল ও ঢাকায় তিন দফা বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকগুলোতে কোন সুরাহা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা