দক্ষিণের কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাবে 'রোগীরা আমাদের সন্মানীত অতিথি, তাদের সেবা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য'। বোর্ডের নীচে লেখা পরিচালক। দেয়ালে যা-ই লেখা থাকুক, বাস্তব চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। রোগীর সেবার পরিবর্তে অফিস কক্ষে বসে খোসগল্পেই সময় কাটছে চিকিৎসক বিশেষ করে জুনিয়র চিকিৎসদের। চিকিৎসা নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী। অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। অবহেলায় রোগী মৃত্যুর প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনদের মারধর করে পুলিশে দেয়াসহ কথায় কথায় ধর্মঘট করাও অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের।
এসব ঘটনায় কোন বিচার না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অবস্থা এমন যে অফিস কক্ষের টেবিলে দুই পা তুলে চেয়ারে হেলে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করছেন তারা। এমন একটা ঘটনা হাতেনাতে ধরে পড়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিবেদকের ক্যামেরায় গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে।
বুধবার রাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন-২ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রারের ডি-৩০১ নম্বরের অফিস কক্ষের টেবিলে দুই পা তুলে চেয়ারে হেলে সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক অভিষেক। এই দৃশ্য দেখে তাৎক্ষনিক ছবি তুলে ফেলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক। ওই ছবি তুলে কক্ষের সামনে লেখা নম্বরের ছবি তুলতে গেলে চেয়ার ছেড়ে দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন ইন্টার্ন চিকিৎসক অভিষেক এবং তার সহকর্মী। তারা হাসপাতালে প্রবেশের জন্য এ প্রতিবেদককে চ্যালেঞ্জ করেন। পরিচালকের অনুমতি নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করা হয়েছে কিনা জেরা করেন তারা।
এক পর্যায়ে তাদের একজন মুঠোফোনে ইন্টার্ন চিকিৎসদের নেতা অনুপকে ফোন দেন এবং এ প্রতিবেদককে তাদের কক্ষে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এ প্রতিবেদক তাদের সামনেই হাসপাতালের পরিচালককে ফোন করে ঘটনা জানালে অস্থির হয়ে ওঠেন ওই দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক। শেষ পর্যন্ত তারা ব্যস্ততা দেখিয়ে সেখান থেকে সরে যান।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), প্রেসক্লাব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, এ ধরনের আচরণ থেকেই চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ মেলে। চিকিৎসা একটা মানবিক সেবা। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই এই সেবাটি বানিজ্যে পরিণত হচ্ছে। এই ধরনের চিকিৎসকদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. নিজামউদ্দিন ফারুক জানান, তিনি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ অক্টোবর ২০১৫/ এস আহমেদ