ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দুর্ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে পরমাণু শক্তি কমিশনের খুলনা কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল (৫২) তার প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়া অরিনকে (১৭) হত্যা করে পরে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় খুলনা মহানগরীর নগরীর ৭ নম্বর আহসান আহমেদ রোডের মৃত আব্দুস সামাদের তিনতলা বাড়ির নীচতলায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আজ বুধবার বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তা মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আত্মহত্যার কারণ জানিয়ে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) উদ্ধার করেছে। সুুমাইয়া অরিনকে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা এবং মোস্তফা কামাল নিজ গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে।
নিহত সুমাইয়া অরিনের মামা ফারুক আহমেদ জানান, জন্মের পর থেকে অরিন শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিল। হুইল চেয়ার ছাড়া সে চলাচল করতে পারতো না। বুধবার রাতে খাওয়ার পর প্রতিদিনের মতো অরিনকে নিয়ে মোস্তফা কামাল এক কক্ষে এবং ছোট মেয়ে আনিকাকে (১১) নিয়ে ওদের মা ইয়াসমীন আরা অন্য কক্ষে ঘুমাতে যান। গতকাল সকালে অরিনের মা ইয়াসমীন আরা দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে ধাক্কাধাক্কি করেন। কিন্তু কেউ দরজা না খোলায় তাকে ফোন দিলে তিনিসহ আরো কয়েকজন ঘটনান্থলে উপস্থিত হয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করেন। এসময় নিহত মোস্তফা কামালের পরনে ছাই রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি ও চেক ট্রাউজার অরিনের পরণে নিল-গোলাপী ফুলের থ্রি-পিচ ছিল।
খুলনা থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক শ্যাম সরকার জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটে মোস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য ইনমাস খুলনার পরিচালক ডা. অশোক কুমার দায়ী। আমি অসুস্থ থাকায় গেস্ট হাইসের নিচে বসতে চাওয়ায় সে আমার সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। ফলে আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে এ পথ গ্রহণ করি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের খুলনা কার্যালয়ের পরিচালক ডা. অশোক কুমার মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নীচতলায় অফিস করার বিষয়ে মোস্তফা কামালের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তার চাহিদা মতো কক্ষও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন কোনো বাক্যবিনিময় হয়নি যার জন্য তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।’
মোস্তফা কামালের ভাই মোস্তফা জামাল জানান, প্রতিবন্ধী মেয়েটি জন্ম নেওয়ার পর থেকেই কামাল মানষিকভাবে হীনমন্যতায় ভুগছিলেন। দুই জনের লাশ গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের আটটাকা গ্রামে দাফন করা হবে বলে তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/৬ জানুয়ারি ২০১৬/শরীফ