বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে জিরো টলারেন্সে অবস্থান নিয়েছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাফিউল ইসলাম। তিনি গত মার্চ থেকে চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২৩টি অভিযান পরিচালনা করেছেন।
এর মধ্যে ১২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বর, কনে, নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী), মৌলভী, বর-কনের পিতা, নিকটাত্মীয় সহ ১৬ ব্যক্তিকে কারাদন্ড এবং ১৭ ব্যক্তিকে অর্থদন্ড প্রদান করেছেন। এছাড়া বিয়ের আসরে অভিযান চালিয়ে ১১টি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসনের এমন শক্ত অবস্থানকে স্থানীয় সুশীল সমাজ যেমন স্বাগত জানিয়েছেন তেমনি বাল্য বিয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে যেসব অভিভাবক দারিদ্রতার কথা তুলে ধরেছেন তাদের সাংসারিক অস্বচ্ছলতার কথা বিবেচনা করে কনের পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সাধ্যমতো সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যাতে নাবালিকা মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ নিয়ে পরিবারটিকে ভাবতে না হয়। এমন পরিবারের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো সমাজে।
শাজাহানপুরে বেশিরভাগ বাল্য বিয়ের কারণ হিসেবে দেখা গেছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব (ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির আশংকা) এবং দারিদ্রতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র তথ্য (২০১২-১৩) অনুযায়ী বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ ১০টি জেলার মধ্যে বগুড়া ১০ম স্থানে (৭৭.১%) রয়েছে। আর বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে বাল্য বিয়ের হার শাজাহানপুরে সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে জিরো টলারেন্সে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাফিউল ইসলাম।
বাল্য বিয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে ইউএনও মো. শাফিউল ইসলাম জানিয়েছেন, একজন কিশোরী শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে আমাদের দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া অল্প বয়সে মা হওয়ায় কিশোরীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এতে দাম্পত্য কহল থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটছে। এগুলো সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সামাজিক শৃংখলা এবং জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধে গোটা জেলায় প্রশাসন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। যেখানেই বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে তৎক্ষনাত নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-১৬