বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এক রোগী। গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম নূরুন্নাহার ইয়াসমিন ওই রোগীর জাবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর রিপন কুমার বিশ্বাস জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন। চর্মরোগে আক্রান্ত ওই রোগী তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর তিনি স্থানীয় যমুনা মেডিকেলের ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকীর কাছে যান। এ সময় রোগীর সঙ্গে তার বাবা ও নানা ছিলেন। এই দফায় ডাক্তার কিছু টেস্ট দেন। প্রায় এক মাস পর রোগী তার মাকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। তখন ডাক্তার মাকে বের করে দিয়ে রোগীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। পরের মাসে গেলে ডাক্তার চিকিৎসার নামে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালান। এ সময় ডাক্তার ভয় দেখান, এ ঘটনার কথা প্রকাশ করলে বিপদে ফেলা হবে। কারণ ভিডিও ক্যামেরায় ধর্ষণের চিত্র ধারণ করা আছে। এ চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ডাক্তার এই রোগীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এই প্রলোভনে ডাক্তার কালক্ষেপণ করতে থাকেন। গত ৩১ ডিসেম্বর এই ডাক্তার তার কর্মস্থলে রোগীকে দেখা করতে বলেন। সে অনুযায়ী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করলে ডাক্তার তাকে ‘মেডিকেল বোর্ডে’ যেতে হবে বলে চতুর্থ তলার এক কক্ষে নিয়ে আবারও ধর্ষণ করেন। এ পর্যায়ে ঘটনার বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে যান। তখন তাদের কাছে সব ঘটনা খুলে বলা হয়।
আদালতে রোগী আরও জানান, তিনি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। চিকিৎসার জন্য এলে ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকী কৌশলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের চতুর্থ তলার একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা শেষে ৮ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে থানায় এসে মামলা করেন তার বাবা।
জানা গেছে, রিয়াদ সিদ্দিকী হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত। চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী রোগীকে উত্ত্যক্ত করার নানা অভিযোগ ওঠে। আদালতে জবানবন্দি দানকারী রোগীর অভিযোগ সম্পর্কে গতকাল বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুুল্লাহ আল হারুনকে প্রশ্ন করলে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডাক্তার রিয়াদ যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতে হবে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানও জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১১ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব