সাভারের আশুলিয়ায় স্কুলছাত্রী শিলা আত্মহননের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিন মাস পর প্রধান আসামি জাফর সাদিককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার দিবাগত রাতে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেওলী গ্রামের তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জাফর সাদিক আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার আব্দুস সাত্তার আলীর ছেলে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.এফ.এম সায়েদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে শিলা। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট লিখে জানিয়ে যায়, এ আত্মহত্যার জন্যর দায়ী কারা। পরে ১৩ অক্টোবর শিলার লিখে যাওয়া চিরকুটের উপর ভিত্তি করে তার বাবা আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে জাফর ও খোকনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা (নং-২৩) করেন। শিলা আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটে উল্লেখ করে, 'যা করিনি তার জন্য কেন দোষী হতে হবে, তার থেকে মরে যাওয়া ভাল। আমার জন্য আমার মা-বাবার সম্মানহানি হোক সেটা আমি চাই না। আমার মৃত্যুর জন্য জাফর-খোকন দায়ী। ইতি হতভাগী শিলা।'
শিলা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কলেশ্বরী এলাকার আওলাদ হোসেনের মেয়ে। আত্মহত্যার ঘটনার দুই মাস পর গত ৫ ডিসেম্বর মামলার দায়িত্ব আসে ডিবিতে। পরে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পটুয়াখালীতে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয় এবং সেখানে অভিযান চালালে শুক্রবার রাতে জাফর সাদিককে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে শনিবার সকালে সাভার ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। অপর আসামি খোকনকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগির তাকেও গ্রেফতার করা হবে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
নিহত শিলার বাবা আওলাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে আমার মেয়েকে বখাটেরা ইভটিং করতো। এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি বলেন, শিমুলিয়া এসপি হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক স্যারকে বলা হয়েছিল, কিন্তু কাজ হয়নি।
নিহত শিলার মা শাহনাজ বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ''আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল সে একজন পুলিশ অফিসার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সে তা হতে পারলো না। বখাটেদের কারণে সে নিজেকে শেষ করে দিল। মেয়ে চলে গেছে কিন্তু দোষীদের কোনো কিছু হচ্ছে না। বখাটেরা আমার কোল খালি করছে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে এরা থামবে? তবে আমার দাবি, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যাতে আর কোন বখাটে এরকম কারও জীবন নষ্ট করতে না পারে।''
সাভার উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুনাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিমুলিয়া এসপি হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শিলাকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটেরা বিরক্ত করত। এই অত্যাচার সহ্য না আত্মহত্যা করে তার হাতে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিলা হত্যার ঘটনায় জাফর সাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোকন এখন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। হত্যাকারী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে দেশের জেলা ও থানার সব জায়গায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব