সাভারে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ প্রায় ৭৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় প্রায় ৮টি মজুরিবোর্ড কর্তৃক ঘোষিত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ শ্রমিক আহত ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকার ১৩ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতন বৈষম্যের বিষয়টি শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে মালিকপক্ষকে জানিয়ে আসছে। তবে তাদের কথায় কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া না পাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার মূল ফটকের সামনে স্থানীয় হেমায়েতপুর-ট্যানারি সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে লাঠিচার্জ শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশসহ ৫০ শ্রমিক আহত হন।
এদিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় প্রায় ৮টি মজুরিবোর্ড কর্তৃক ঘোষিত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ শ্রমিক আহত ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকার ১৩ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অব্যাহত শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ৩ দিনের মতো আশুলিয়ার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকালে কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে তারা কারখানার বাইরে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আশপাশের বিভিন্ন পোশাক কারাখানায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর শুরু করে। পরে খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন সংযোগ সড়কে অবস্থান নিলে দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, পথচারীসহ ২৫ শ্রমিক আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, এর আগে আমরা আট হাজার টাকা ন্যূনতম বেতন দাবি করেছিলাম সেখানে মজুরিবোর্ড নির্ধারণ করেছে পাঁচ হাজার তিনশ’ টাকা। অথচ সেই মজুরি দিতেও মালিকপক্ষ গড়িমসি করে আমাদের সাথে অমানবিক আচরণ করছেন। এছাড়াও মজুরিবোর্ড কর্তৃক ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে মালিকপক্ষ আমাদেরকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই এর দায়-দায়িত্ব মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরো বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। তাই তারা অবিলম্বে মালিকপক্ষকে নতুন ঘোষিত বেতন কাঠামো মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। অন্যথায় তারা রাজপথে আন্দোলন ছাড়াও আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে আমার ৮ জন পুলিশ গুরুত আহত হয় এবং পুলিশকে লক্ষ করে ৫টি পেট্রল রোমা নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও যেকোনও অপ্রিতীকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল