অগ্রীম টিকেট বিক্রয় ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখার লক্ষ্যে সকল প্রকার টিকেট ব্লকিং বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকরের জন্য ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সিএনএস লিমিটেডকে বলা হয়েছে।
গত রবিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানা এ তথ্য গেছে।
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম), প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) ও প্রধান পরিবহন কর্মকর্তাকে (সিওপিএস) দায়িত্ব দেয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন কোটার টিকেটও ৪৮ ঘণ্টা আগেই উন্মুক্ত হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে রেল অঙ্গনে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লেখ রয়েছে, অগ্রীম টিকেট বিক্রয় ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সকল প্রকার টিকেট ব্লকিং (অটো কোটা ব্যতিত) বন্ধ রাখার জন্য সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের অনুরোধ রইল। অটো কোটাসমুহের টিকেট পরিচালক (ট্রাফিক), বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেল ভবন ও স্ব স্ব ডিসিও কর্তৃক ইতোপূর্বে জারীকৃত অত্র দপ্তরের পরিপত্র অনুয়ারী (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২) ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় রেলওয়ের টিকেটের অপ্রতুলতা দীর্ঘদিনের। এরপরও বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে যে পরিমাণ টিকিট থাকে সেগুলোর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট অনুরোধ ও ভিআইপিদের জন্য ব্লক বা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তবে সর্বশেষ ঈদে ভিআইপি বাদে অন্যান্য টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নিয়েছিল রেলওয়ে। এবার সারাবছরই টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত টিকিট ৪৮ ঘণ্টা আগে উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে রেলওয়ে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোটার টিকেটগুলো ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে কত ঘণ্টা আগে রিলিস করা হবে সেটাও নির্দেশনা দেয়া হবে। এসব বিষয়ে ১২ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানও রয়েছে। তবে টিকেট কালোবাজারীসহ নানাবিধ বিষয়ে রেল প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলের টিকিট বিক্রিতে নানা ধরনের কোটা রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রভাবশালীদের চাপে বিভিন্ন সময়ে নির্ধারিত কোটার বাইরেও টিকিট সংরক্ষণ করতে হয়। চাহিদার তুলনায় রেলের টিকিটের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ বিশেষ ট্রেনগুলোতে নিয়মের বাইরে টিকিট সংরক্ষণের চাপ আসে। নতুন নিয়ম চালু হলে রেলের টিকিট বিক্রি ও স্টেশন কেন্দ্রীক কর্মীরা নাজেহালের শিকার হবে বলে আশঙ্কাও করছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালের পরিপত্র অনুযায়ী সকল আন্তঃনগর ট্রেনে সংসদ সদস্য, বিচারপতি, ভিআইপি, প্রতিবন্ধী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য কোটায় নির্ধারিত সংখ্যক সংরক্ষিত আসন ব্যতিত সকল আসন যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের উপ-পরিচালক/টিসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে পূর্বের আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জারীকৃত সকল আদেশ বাতিল করা হয়। পরিপত্রে আসন সংরক্ষণ বাতিল করতে ৫টি বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে ট্রেনের টিকিট পেতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৬ নভেম্বর রেলভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক পরিচালন পর্যালোচনা সভায় (ওআরএম) কাউন্টারের টিকিট ও অনলাইনের টিকিট এক তারিখে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত টিকিটগুলো ৪৮ ঘণ্টা আগে কাউন্টার বা অনলাইনে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকে ৬২টি টিকিট, মহানগর প্রভাতী ও গোধুলী ট্রেনে ৬০টি করে, সূবর্ণ এক্সপ্রেসে ৬৮টি করে সর্বোচ্চ পরিমাণে টিকিট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষণ করা থাকে। এর মধ্যে সূবর্ণ এক্সপ্রেসে বিচারপতিদের জন্য ৪টি, সাংসদের জন্য ৪টি, ভিআইপি ৮টি (স্নিগ্ধা), বিশেষ কোটা ১২টি (শোভন চেয়ার), ভিআইপি ৮টি (শোভন চেয়ার), বিশেষ কোটা ১২টি (শোভন চেয়ার) এবং প্রতিবন্ধী কোটায় শোভন চেয়ার শ্রেণির টিকিট সংরক্ষিত থাকে ২০টি। অন্যান্য ট্রেনে অন্যান্য নিয়মিত কোটার পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কোটা, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য টিকিট সংরক্ষণ করা থাকে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন