শুরু হয়েছে মৌসুমের তৃতীয় শৈত্যপ্রবাহ। হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখির অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জ্বর, খাবার অরুচিসহ নানা রোগে ভুগছে রংপুর অঞ্চলের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণি।
রংপুর প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্র মতে, প্রতিটি জেলায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ গবাদি প্রাণী রয়েছে। সেই হিসেবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে প্রায় ৬ কোটি। অব্যাহত শীতে এসব প্রাণীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। নানা রোগ বালাইয়ের কারণে হ্রাস পাচ্ছে এদের প্রজনন ক্ষমতাও। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দ্বিতীয় শৈত্য প্রবাহ। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের রবিবার রাত থেকে আবার শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে।
শীতের দাপট থেকে বাঁচতে অনেক খামারি গরম কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে গবাদি পশুর দেহ ঢেকে রাখছে। অবশ্য প্রাণী সম্পদ বিভাগের দাবি, এ পর্যন্ত তারা কোন প্রাণীর মৃত্যুর খবর পাননি।
তবে সূত্র মতে, শীতে গামবোরো জাতীয় রোগে প্রচুর পরিমাণে ব্রয়লার, কক, সোনালি ও লেয়ার মুরগি মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ রোগকে মুরগির এইডস বলা হয়। এছাড়া গরু মহিষের গলাফুলা রোগে প্রাণহানি ঘটতে পারে। এই রোগকে স্থান বিশেষে গলাফুলা, ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা রোগ বলা হয়। এছাড়া শীতে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার ক্ষুরা রোগের আশঙ্কা রয়েছে। শীতের কারণে গরুর বাদলা, ফ্যাসিওলিয়াসিস, তড়কাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ এলাকার খামারি রমজান আলী জানান, শীতের কারণে তার কয়েকটি গরুর খাবার রুচি কমে গেছে এবং জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়ায় তিনি চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। একই উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, তার একটি গরু শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য গরুটিকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখছেন তিনি। প্রকৃতিতে মাঘ মাসের আগমন হতে আরও কয়েকদিন বাকি আছে। অথচ পৌষের শেষ সপ্তাহে এসে গোটা উত্তরাঞ্চলে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকূলেও দেখা দিয়েছে নানান ভোগান্তি।
রংপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শাহ জালাল খন্দকার বলেন, ‘শীতে এখন পর্যন্ত কোন প্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রচণ্ড শীতের কারণে গরু ছাগলের জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিটি উপজেলায় মনিটরিং করছে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত কয়েকদিন থেকে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা নামা করছে। এর মধ্যে তেতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কয়েকদিনের বিরতির পর রবিবার রাত থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থা আরো কয়েকদিন থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল