করোনাকালের একটি বছর শেষে নতুন বছরে বিশ্ব। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগতম জানানোর সাথে সাথেই প্রার্থনা কোভিড চলে যাওয়ার। মহামারীর মহা দুর্ভোগ কাটেনি এখনো। ঘরে থেকে কাজের পরে ব্যস্ত জীবনে ফিরতে হয়েছে আবারো। সব-ই আছে আগের মতো, শুধু ভয় বেড়েছে। ঘর থেকে এক পা বাইরে মানেই- কি হয় কি হয়, কাছের মানুষকেও আর কাছে ডেকে স্বস্তি নেই। এমন যখন পরিস্থিতি তখন মানুষ যাত্রা পথে খুঁজেছে নিরাপত্তা। বেঁচে থাকার এবং বাঁচিয়ে রাখার।
পৃথিবীজুড়ে করোনাকে ঘিরে চলছে হাজার গবেষণা। তারই মধ্যেই একটি কানাডার ওন্ট্যারিওর এমসি মাস্টার ইউনিভার্সিটির পিএইচডি রিসার্চার শায়লা জামালের প্রতিবেদন। কোভিড-১৯ পরবর্তী অবস্থায় পরিবহন পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়ে সম্প্রতি বেসরকারিভাবে পরিচালিত এই গবেষণার প্রতিবেদনে ভ্রমণ আচরণের আন্তঃজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেছেন গবেষক। এই জরিপে অংশ নিয়েছে বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীরা, এবং বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণ, যাদের নিত্য প্রয়োজনে রোজ বাইরে যাওয়া আবশ্যক।
তিন শতাধিক নমুনার ফলাফল সংগ্রহের পর, গবেষণাটি এই উপসংহারে আসে যে এই মহামারীর সময়ে মোটরসাইকেল সবচেয়ে নিরাপদ বাহন। এই গবেষণা থেকে পাওয়া মূল অনুসন্ধান দুটি। প্রথমটি ছিল, দিন দিন মহামারী ছড়াচ্ছে আর শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য জনগণ হাঁটার পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল বেশি ব্যবহার করছে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অন্যান্য বাহনে যাতায়তের ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, আমাদের রাজধানী ঢাকার ৭৫% জনগণ বিশ্বাস করে যে গণপরিবহনে একইসাথে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। আবার ব্যস্ত এ শহরে নিজস্ব গাড়ি কেনা এবং ব্যবহারের সঙ্গতি বেশিরভাগ মানুষের নেই বললেই চলে। রাইড শেয়ারিং বেশ খানিকটা অনিরাপদ বলেই বিবেচিত হচ্ছে। কারন কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিং এর সিট, হাতল এমনকি চালকের কাছ থেকেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। আর বাইসাইকেল বেছে নেয়ার মতো শহর ব্যবস্থাপনা আমাদের নেই বললেই চলে। ধূলা-বালি ও আবহাওয়ার কারণে সাইকেল চালিয়ে অফিস বা ক্লাসে যাওয়া খুব একটা সহজ না।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৮০%-এরও বেশি মানুষ বিশ্বাস করে যে, মোটরসাইকেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব। একই সাথে ৭৯% অংশগ্রহনকারী বিশ্বাস করে করোনাকালে মোটরসাইকেল তুলনামূলকভাবে বেশ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত। তথ্য অনুযায়ী, ৮৪% নাগরিক বিশ্বাস করেন মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী এবং উপযুক্ত বাহন। এরই মাঝে ৬৯% মনে করেন মোটরসাইকেল আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী যার যার ব্যাক্তিগত পছন্দ। ৩৩% মানুষ নতুন বছরে মোটরসাইকেল কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।
গুগল কোভিড-১৯ কমিউনিটির প্রতিবেদন অনুসারে, এই পরিস্থিতিতে বাস এবং ট্রেনের মতো গণপরিবহনে যাত্রীদের যাতায়ত পর্যন্ত কমে এসেছে। সংখ্যার হিসেবে তা ৩৬ শতাংশ। করোনাকালের লকডাউনের পরে মানুষ যখন থেকে ফিরতে শুরু করেছে কাজে, তখন থেকেই জনগণ ব্যক্তিগত বাহন যেমন গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং বাইসাইকেলের ওপর বেশ নির্ভরশীল হয়েছে।
সারা বিশ্বেই বেড়েছে মোটর সাইকেলের বিক্রি। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবরে প্রকাশিত ফর্বস ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুযায়ী- কোভিড-১৯ এর প্রভাবে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে মোটরসাইকেল এবং বাইসাইকেলের বিক্রি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল