সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিটার বাক্সটি যাত্রীর ভাড়া পরিশোধে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি এখন শুধু পুলিশকে দেখানোর জন্য রাখা হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই মিটারের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। বরং মিটার ছাড়া ভাড়া চুক্তিতেই নিজেদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। এমনকি কয়েক বছর আগেও সিএনজি চালককে মিটারে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও চালকের অনীহার কারণে যাত্রীরা এখন আর মিটারের প্রসঙ্গই তোলেন না। আবার ‘ও ভাই’ নামক সেবায় নিবন্ধিত হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিএনজি চালক ও মালিক এখন অ্যাপস নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। যা কিনা সাধারণ ভাড়ার চেয়ে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিকভাবে কোনো আইন না থাকায় সিএনজিচালকদের শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। সিএনজি অটো চালকদের এই নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীতে মাত্র ২ শতাংশ অটোরিকশা মিটারে চলে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৯৮ ভাগই চুক্তিতে চলে। আবার যাত্রীদের পছন্দমতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৮ শতাংশ অটোরিকশা। মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মাহফুজ আহমেদ বলেন, মিটারে গাড়ি চালালে মালিককে জমার টাকা দেওয়ার পর যে টাকা থাকে তাতে আমাদের পোষায় না। তিনি আরও বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ সিএনজিচালক এখন আর মিটারে গন্তব্যে যান না। তারা ভাড়াচুক্তিতে বা ‘ওভাই’ অ্যাপস ব্যবহার করে যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নেন। মিটারে যাত্রী পরিবহন না করলেও যাত্রী উঠানোর পর মিটার চালান। আবার কখনো কখনো পুলিশ আটকালে যাত্রীকে মিটারে যাচ্ছেন এমন মিথ্যা কথা বলার অনুরোধ করেন। তিনি জানান, পুলিশ ধরলে যদি দেখেন যে ভাড়াচুক্তিতে যাত্রী নিচ্ছেন তাহলে মামলা দিতে পারেন। এ জন্য মিটার চালু রাখেন। প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সিএনজি বা পেট্রোলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ভাড়ার হার সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই সময় থ্রি-হুইলারের দৈনিক জমার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। পরবর্তী প্রতি কি.মি.-এর ভাড়া ১২ টাকা করে। আর বিরতিকালের জন্য প্রতি মিনিটে নির্ধারণ করা হয় দুই টাকা করে চার্জ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ওই বছরের ১ নভেম্বর সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া কার্যকর করে। আর সেই সময় থেকেই মিটারে যেতে চালকদের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মিটার নিয়ে বহুদিন ধরেই চোর-পুলিশ খেলা চলছে। পুলিশ আসলে চালকরা বলে তারা মিটারে চলছে আবার পুলিশ চলে গেলেই তারা চুক্তিতে যাত্রী বহন করে। আগে আইন ছিল মিটারবিহীন গাড়ি চালালে আড়াই হাজার টাকা জরিমানা হবে। আর এখন মিটারবিহীন সিএনজি অটোরিকশা চালালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। যদি সরকার এখনই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০টি গাড়িকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে এবং এটি যদি গণমাধ্যমে ফলাও হয় তাহলে আমি বিশ্বাস করি সব অটোরিকশা চালক শৃঙ্খলায় ফিরে আসবেন। কিন্তু এমনটি না করে দায়িত্বশীল মহল নিজেদের কর্মতৎপরতা তুলে ধরতে এক ধরনের সান্ত্বনামূলক অভিযান পরিচালনা করে নামমাত্র জরিমানা করে। কিন্তু এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে আইনে যা বলা আছে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। সরকার যদি রাজনৈতিকভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করে যে পরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনবে তাহলে এই ছোট উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিএনজিচালক অটোরিকশার মিটারে চালানোর ব্যাপারে এক্সিকিউটিভ অর্ডার হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে এমন অভিযোগ আসলে আমরা বিষয়টি তদারকি করি। কিন্তু সার্বিকভাবে কোনো আইন না থাকায় সিএনজিচালকদের শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল