আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ তরুণ। তাদের উপর নির্ভর করছে এদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ৯০ শতাংশ তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। কাজেই তরুণদের বাদ দিয়ে দেশকে কল্পনাও করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ এবং লালন করে তরুণদের এদেশের দায়িত্ব নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে “ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ও তারুণ্যের ভাবনা’’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভি।
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনীতির মধ্যে শালীনতাবোধ থাকা উচিত। বিএনপির মধ্যে কখনো শালীনতা ছিল না। অশুভ ও অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করার ফলে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষাও নাই, কখনো ছিলও না। আজকে শুধু আলাল নয়, বিএনপি শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করতে পিছপা হননি। বিএনপি নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে কর্মীসভা করে। জাতির পিতার নাম নেয়ার সময় শ্রদ্ধা নিয়ে পুরো নামটাও উচ্চারণ করে না। এরা কত বড় অসভ্য, অশিক্ষিত হলে এসব করতে পারে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তার মায়ের বয়সী, তার পুরো নামটাও নেয় না। বিএনপি নামক দলটি শালীনতা বিবর্জিত, অসভ্য, কুরুচিপূর্ণ দল এটা বারবার প্রমাণিত।
হানিফ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডা. মুরাদের কথা আসার পরে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে জেলা কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ কখনো অরুচিকর কথা-বার্তা, অশালীন বক্তব্য সমর্থন করে না। আলাল যে কুরুচিকর বক্তব্য দিয়েছে, বিএনপি তো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো সাফাই গেয়ে তার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আগামী সাত দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জননেত্রীকে নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে তাদের যেখানে পাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। যাতে ভবিষ্যতে তারা আর এধরণের কাজ করার ধৃষ্টতা দেখাতে না পারে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে কী-নোট উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম মাসুম বিল্লাহ। উপস্থাপনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আমি এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা হবে দরদ দিয়ে, উপলব্ধি দিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতে হবে হৃদয় দিয়ে। তিনি বাঙালি জাতিকে শুধু দিয়েই গেছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্টের পরে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির আর কিছু দেয়ার নেই। শুধু রয়েছে তার দীক্ষা, আত্মোপলব্ধি আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করার প্রত্যয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, বাঙালির যা কিছু অর্জন, যা কিছু ভালো সবই তরুণদের কারণে হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ, তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণরা আমাদের বর্তমান, তারাই আমাদের ভবিষ্যত।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, আমাদের তরুণদের সঠিকভাবে পরিচালিত করতে একটি সঠিক রাজনৈতিক দর্শন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রায় সকল সিস্টেম তরুণ বিমুখ ছিল। ২০০৮ সালের ইশতেহারে যখন দেশের হবু প্রধান তরুণদের নিয়ে ভাবছেন, সেটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। সেই ইশতেহারই ছিল আমাদের তরুণদের অগ্রযাত্রার পথে প্রথম সোপান।
প্রজন্ম '৭১-এর সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুদ্দীন আব্বাস বলেন, তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে আমরা বুঝি না। বঙ্গবন্ধু চর্চা করলে দেশপ্রেমের জন্য আর কিছুর প্রয়োজন নেই। দেশে তারুণ্যের বিকাশের জায়গা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশে এক শ্রেণির নিঃস্ব মানুষ আছে যাদের মা নেই, কারো বাবা নেই তারা এতিমখানায় পড়ছেন। তারা মৌলবাদীদের গড়া মাদ্রাসায় পড়ছেন। তারা অবৈধভাবে গাড়ি, সদরঘাট থেকে মানুষকে বিব্রত করে চাঁদা তুলছে। সেই চাঁদা দিয়ে তারা এতিমখানা চালাচ্ছে। তাদের কি শেখানো হচ্ছে, তারা জাতীয় সংগীত জানে না, মর্ম বোঝে না। তাদের কাছে জাতীয় সংগীতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাসী। নেত্রী অবিচল ছিলেন। অন্যদের মতো নিজের বাবার বিচার করতে চেয়েছিলেন। ন্যায়পরায়ণতা মুখেই বলেন না, বিশ্বাসও করেন। ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজাকারদের শাস্তি হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরও বিচার হয়েছে।
ডিবিসি নিউজের ডিরেক্টর, স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং অপো মোবাইল বাংলাদেশের ফ্যাক্টরি ওনার সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটা জায়গায় দেশপ্রেম লাগবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সকলকে যার যার জায়গা থেকে দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু মালিক পক্ষ নয়, শ্রমিকদের মধ্যেও ভালোবাসা লাগবে।
কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক স্বকৃত নোমান বলেন, ধর্মের সাথে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের ধর্মের বাণী, মানবতার বাণী, ধর্মের সঠিক ব্যাখা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে সাম্প্রদায়িতার মতো ঘটনা ঘটবে না। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও একটি ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। সেটা হলো সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি লাভ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা২৪ডটনেট সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, আমাদের এই ছোট্ট দেশে হাজারো সমস্যা আছে, আছে অপার সম্ভাবনাও। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে আমরা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখছি আর এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের তরুণরা দুর্বিনীত, তারাই যোদ্ধা। তারাই সকল অন্ধকার দূর করে বৈষম্যহীন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা২৪ ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, ছোট্ট একটা দেশ আমাদের। আমাদের হাজারো সমস্যা, হাজারো চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি অপার সম্ভাবনাও রয়েছে। আমাদের সেই সম্ভাবনার নাম জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ নেতৃত্ব এবং তেজস্বী তারুণ্য। এই তরুণদের হাত ধরেই সব অন্ধকার দূর হবে। দূর্বিনীত, সাহসী তারুণ্যই বিনির্মাণ করবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, বৈষম্যহীন সোনার বাংলা। এদের হাত ধরেই আমরা পাবো আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ।
জাগরণ টিভি’র প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, গৌরব’৭১ এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল রূপম, বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল এবং বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিকগণ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত