রাজশাহীতে নানা আয়োজনে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ করছে রাজশাহীর মানুষ। মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে ৫০ বার তোপধ্বনি করা হয়। এর মধ্যেদিয়ে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হয়।
দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহীবাসী যেমন মেতেছেন বিজয়ের আনন্দে, তেমনি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন-একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই রাজশাহীর প্রতিটি শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। রাজশাহী মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন-বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রথমেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর। এরপর রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিল, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়াও এখানে পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রেঞ্জ এবং জেলা আনসার, বনবিভাগ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও ডাকবিভাগসহ বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকালে রাজশাহীর কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
সকাল ৯টায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিল, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল মাঠে নারীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন রাজশাহী শিশু একাডেমিতে শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতাসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাসরি ও অনলাইন রচনা প্রতিযোগিতাসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, সরকারি শিশুসদন, শিশু একাডেমি, বৃদ্ধাশ্রম, ছোটমনি নিবাস, অন্ধ, মূক ও বধির বিদ্যালয়, সেফ হোম, এসওএস, শিশুপল্লী, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, বেসরকারি এতিমখানায় এদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাদ জোহর সব মসজিদে এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হচ্ছে।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে রাজশাহীর সব সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রও।
বিজয় দিবসে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, সড়কদ্বীপ ও বিভিন্ন স্থাপনা জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এদিন পার্ক, জাদুঘর বিনা টিকেটে শিশুদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন