গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরায় রাস্তা পার হতে গিয়ে নয়; বরং ওই বাসের ‘গতিরোধ’ করতে গিয়ে বাস হেল্পারের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তিতে পড়ে গিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হন শিক্ষার্থী মইনুদ্দিন দুর্জয়। এমনকি মইনুদ্দিন সেদিন একটি নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল বলে দাবি করেছে র্যাব।
বুধবার দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, ‘গত ২৯ নভেম্বর গাজীপুর চৌরাস্তায় অনাবিল পরিবহনে উঠতে গিয়ে বাসের হেলপার, চালকের সঙ্গে ঝগড়া হয় দুর্জয়ের ভগ্নিপতি সাদ্দামের। সাদ্দাম পরে ওই চালক ও হেলপারকে শিক্ষা দিতে রামপুরা এলাকায় তার শ্যালক দুর্জয় ও পরিচিতজনদের সহযোগিতা চান।’
দুর্জয় ও অন্য সহযোগীরা সাদ্দামের পরিকল্পনা মোতাবেক রামপুরা টিভি সেন্টারে জড়ো হন। আগে থেকেই বাসটির নম্বর জেনে থাকায় পরিকল্পনাকারীর রামপুরার পলাশবাগ মোড়ে বাসটির অবস্থান শনাক্ত করেন। তখন মাঈনুদ্দিন দুর্জয় বাসে উঠে বাসটির গতিরোধ করার চেষ্টা করেন। পরে হেল্পারের সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে তিনি সড়কে পড়ে যান। বাসটির চাক্কায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
তিনি বলেন, গত ২৯ নভেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছিল একটি কুচক্রী মহল। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অভিযান চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত এমন চারজন গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর রামপুরা ও কুমিল্লা অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ঘটনার অন্যতম হোতা মনির হোসেন (৫৪), মো. হৃদয় হাসান পারভেজ (১৯), মো. আলাউদ্দিন সিফাত (২৫) ও মো. নাঈম হাসান মীর (২৪)।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৯ নভেম্বর রাজধানী রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে অরাজকতা তৈরির অপচেষ্টা করা হয়। এসময় চলমান শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যুকে উসকে দিতে অপপ্রচার চালানো হয়। ঘটনার পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সহিংসতার পেছনের কারণ উদ্ঘাটনে নিবিড়ভাবে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন গোয়েন্দারা। পরে র্যাব ও এনএসআই যৌথ অভিযান পরিচালনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
‘জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা র্যাবকে জানায়, মনিরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রামপুরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশব্যাপী একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। তারা জানতে পারে গাজীপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় সম্ভাব্য উত্তেজনা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। ওই ঘটনাকে ব্যবহার করে তারা রামপুরার বিটিভি ভবন এলাকায় সম্ভাব্য নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নেয়।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক