এক নারী, দুই যুবক। ত্রিভুজ প্রেম। দু'জনের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটান প্রেমিকা পুষ্প আক্তার (১৯)। কোন প্রেমিকই পুষ্প'র প্রতারণার বিষয়টি টের পাননি। যদিও বিষয়টি বেশি দিন গোপন থাকেনি। এক পর্যায়ে আল-আমিনের কাছে ধরা পড়ে যান পুষ্প। অবশেষে গত ২৫ ডিসেম্বর আল আমিনের নির্দেশে অন্য প্রেমিক সোহেল রানাকে বাসায় ডাকেন পুষ্প।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোহেলকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে ডেমরা এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে ফেলে রাখেন তারা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে প্রেমিক আল আমিন, প্রেমিকা পুষ্পসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরইমধ্যে তারা আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডেমরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আজহারুল ইসলাম মুকুল।
ডিবি সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সোহেল রানা (৩২)। একই কারখানায় চাকরি করতেন পুষ্প আক্তার (১৯)। চাকরির সুবাদে পুষ্প'র সঙ্গে সোহেল রানা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। করোনা মহামারীর শুরুতে চাকরি হারান সোহেল। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ মান্দা উপজেলার কুশুম্বায় চলে যান। মাঝে মাঝে ঢাকায় এসে পুষ্পর সঙ্গে দেখাও করতেন। পরষ্পর মোবাইলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও আদান-প্রদান করতেন। তবে এরই মধ্যে আল আমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান পুষ্প।
আল-আমীন রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ভাসমান ফুল ব্যবসায়ী। তবে আল-আমিনের অজান্তে সোহেলের সঙ্গেও পুষ্পের চলতে থাকে হৃদয়ের লেনদেন। সম্প্রতি বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে আল-আমিন পরিকল্পনা করেন সোহেলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার। গত ২৫ ডিসেম্বর এক সঙ্গে থাকার কথা বলে ডেমরার বকুলতলা (মহসীন ক্যাশিয়ার বাড়ি) বাসায় ডেকে আনেন সোহেল রানাকে। পূর্ব পরিকল্পিত অনুযায়ী পুষ্পের স্বামী ও অন্যন্যরা ঘরে প্রবেশ করে হাত-পা মুখ বেঁধে ফেলে সোহেল রানার। এরপর সোহেলের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করে। আরও টাকা না দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় সোহেল রানাকে। ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে সোহেলের লাশ ফেলে দেয়া হয়। খুনিদের ধারণা ছিল, অনেকেই মনে করবেন নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে সোহেল আত্মহত্যা করেছে।
এডিসি আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুষ্প এবং আল-আমিন বিবাহিত দাবি করলে এ সংক্রান্তে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ত্রিভুজ প্রেমের বলি হন সোহেল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আল আমিন ও পুষ্প সোলাইমান হোসেন, রুহুল আমিন ও বেলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের সবাই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতার পাঁচজনের পরিকল্পনায় সোহেল রানার লাশ রাতের অন্ধকারে ডেমরার দারুল নাজাত মাদ্রাসার নির্মানাধীন ভবনের পাশে একটি পরিত্যাক্ত গলিতে লাশ ফেলে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার একদিন পর ২৬ ডিসেম্বর নিহত সোহেল রানার স্বজনরা ডেমরা থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৩০ ডিসেম্বর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি'র ডেমরা জোনের পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আল-আমিনের পরিবারের অনেকেই নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তার এক ভাই রুহুল আমিনের নামে তিনটি মামলা রয়েছে। পুষ্প ছাড়া হত্যাকাণ্ডে পাঁচ ভাই জড়িত ছিল।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত