গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাদের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিতরা হলেন-কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার হাপুরখাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে কামরুল হাসান। তিনি কালিয়াকৈরে গোলাম নবী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। অপরজন তার স্ত্রী আমেনা খাতুন।
এলাকাবাসী, লাঞ্ছিতের পরিবার ও সিসি ফুটেজ সূত্রে জানা গেছে, গোলাম নবী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান তার বকেয়া তিন মাসের বেতন পান। এই সুযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলকাছ উদ্দিন তার কাছে একটি স্বর্ণের আংটি দাবি করেন। কিন্তু তিনি আংটি দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় প্রধান শিক্ষক তাকে বিভিন্ন সময় হেয় প্রতিপন্ন করে আসছেন।
শুধু তাই নয়, ওই সহকারী প্রধান শিক্ষককে চাকরি করার যোগ্য নয় দাবি করে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন ওই প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাকে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। এ কারণে গত শনিবার ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক একটি অব্যাহতিপত্র প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দেন। পরের দিন রাতে ওই প্রধান শিক্ষক ফোনে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। কিন্তু তিনি আর ভয়ে বিদ্যালয়ে যাননি।
সোমবার সকালে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য মীমাংসার কথা বলে তাকে ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি ভয়ে তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে নিয়ে কালিয়াকৈর বাজারের একটি দোকানে বসেন। খবর পেয়ে ওই প্রধান শিক্ষক তার দুই কর্মচারী সোহেল রানা ও মালেককে নিয়ে ওই দোকানে যান। এসময় তারা তিনজনে ওই সহকারী প্রধান শিক্ষককে টানাহেঁচড়া করেন এবং মারধর করেন।
স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে ওই প্রধান শিক্ষক ও তার দুই কর্মচারী। এছাড়া তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাকে ধরে আনার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। এ লাঞ্ছিতের ঘটনায় ওই সহাকারী প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বাদী হয়ে সোমবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই সহাকারী প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান জানান, আমার তিন মাসের বকেয়া পড়া বেতন পাওয়ার পর ওই প্রধান শিক্ষক আমার কাছে একটি স্বর্ণের আংটি দাবি করে। আংটি না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণসহ হুমকি-দামকি দেন। তার ভয়ে আমি অব্যাহতিপত্র দিয়েছি। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি বিদ্যালয়ের দুই কর্মচারীকে নিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করেছে। এছাড়াও নানা অপকর্মের জন্য একাধিকবার বহিষ্কার হয়ে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন।
সিসি টিভি ফুটেজে তাদের লাঞ্ছিতের চিত্র দেখা গেলেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলকাছ উদ্দিন বলেন, আমি মারধর করি নাই। উল্টো উনারাই আমার কর্মচারীদের মারধর করেছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান জানান, এ ঘটনায় উভয় শিক্ষক থানায় দুটি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই