আর মাত্র ৬ দিন পরেই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র প্রাথীদের মাঝে চলছে সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা ওই দিন কী করবেন এ নিয়ে চলছে বিশ্লেষন। বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতার সাথে কথা হলে তারা সাফ বলেছেন নির্বাচন বর্জন করেছি। ভোট দানেও বিরত থাকবে নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি নেতাদের তথ্য মতে জামায়াত ও বিএনপি’র সমর্থক ভোটার রয়েছে ৭০ হাজারের বেশি। এসব ভোটারদের মান ভাঙাতে একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ হিসেব করছে নিজস্ব ভোট ছাড়াও হিন্দু ও অবাঙালি ভোটারদের ভোট যদি নৌকার ঝুলিতে নেয়া যায় তা হলে বিজয় হাতের মুঠোয়। হিন্দু ও অবাঙালি ভোট রয়েছে ৬০/৭০ হাজার। জাতীয় পার্টি হিসেব করছে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত যেসব এলাকা রয়েছে সেইসব এলাকার ভোটারদের পক্ষে নিতে পারলে জয় সুনিশ্চিত। এছাড়া এটা লাঙলের ঘাটি এই তৃপ্তিও রয়েছে জাপার মাঝে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের সমর্থকরা হিসেব করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত এবং বিএনপি জামায়াতের ভোট নিজের পক্ষে নিতে পারলে তিনি ভোটের জয়ী হবেন।
মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মার্কা প্রীতির কারণে হিন্দু ভোটাররা নৌকা মার্কাকেই বেছে নিবেন। কারণ ১৯৯০ সালের পর থেকে রংপুর সদর একচেটিয়া শাসন করছে লাঙল প্রতীক। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন। অপরদিকে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে কাজ করেছিলেন অবাঙালি নেতারা। সেই সমীকরণ মাথায় রেখেও নৌকা মার্কার নেতারা কাজ করছেন।
এদিকে জাতীয় পার্টি মনে করছে এটা তাদের ঘাটি। তার পরেও জাপা উন্নয়ন বঞ্চিত বর্ধিত এলাকার দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। এসব এলাকার ভোটারদের মাঝে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও মার্কা প্রীতির কারণে এবারও তারা লাঙলেই ভোট দিবেন এমন আশা করছেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। যদি বর্ধিত এলাকার বেশিরভাগ ভোট লাঙলের পক্ষে যায় তা হলে ফলাফল নিজেদের পক্ষে থাকবে এমনটাই মনে করছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ভোট তার পক্ষে নেওয়ার জন্য নেতা-সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কার আমিরুজ্জামান পিয়ালের পক্ষ থেকেও বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানাগেছে।
এদিকে বিএনপি জামায়াত যদি ভোট বর্জন করে তাহলে ভোট প্রদানের হার গত বছরের চেয়ে অনেক কম হবে এমনটাই মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা।
সব মিলিয়ে দেখা গেছে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো সব প্রার্থীই ভোটের সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব কষতে শুরু করেছেন। তবে এই সংখ্যাতত্ত্ব কতটুকু কাজে লাগবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোটের ফলাফল গণনা পর্যন্ত।
মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বলেন, আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। সেই সাথে ভোটও বর্জন করেছি। নেতা-কর্মীদের ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। আশাকরি বিএনপির কোনো সমর্থক ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল উন্নয়নের স্বার্থে এবার রংপুরের মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিবেন এমনটা আশা করেন।
জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৭৫ জন। নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডে গত বছর ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার থাকলেও এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জনে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল