ব্যবসায় উত্থান-পতন আছে। যারা সৎভাবে ব্যবসা করবে তাদের সকল ধরনের সহায়তা দেয়া হবে যাতে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। দেশে দুই ধরনের ব্যবসায়িক শ্রেণী আছে। একটি ভালো শ্রেণীর। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী। আমরা ভালো ও অসাধু ব্যবসায়ীদের এক কাতারে ফেলব না। ভালো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে পারেন। তারা ঝুঁকি নেন ব্যবসা করতে। ঝুঁকি নিয়ে ঋণ নেন। কিন্তু সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। তবে দেখতে হবে তারা ব্যবসার জন্য চেষ্টা করছেন কিনা। তাই তাদের সব ধরনের সহায়তা ও ছাড় দেওয়া হবে। তাদের কোন ধরনের হয়রানি করা হবে না। ব্যবসায় যাতে ঘুঁরে দাঁড়াতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে।
বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন অডিটরিয়াম হলে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা জানান।
অসাধু ব্যবসায়ি ও ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, শক্ত ও বড় অনিয়মের বিরুদ্ধে দুর্বল ব্যবস্থা নিলে ব্যর্থ হতে হবে। দুষ্ট চক্রকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি ব্যাংকগুলোতে সুশাসন বাড়াতে শিগগিরই বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করা হবে।
রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রধান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে উদ্বেগ খেলাপী ঋণ। এটা একটি অপরাধ। খেলাপি ঋণ অবশ্যই অপরাধ। জনগণের টাকা, কৃষকের টাকা, দিনমজুরের টাকার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে সেটি ব্যর্থতা হিসেবে চিহিৃত হবে।
তবে যারা অসাধু ব্যবসায়ী তাদের কোন ছাড় নয়। শক্তভাবে ধরা হবে তাদের। মালেশিয়াতে ঋণ খেলাপিদের তালিকা করা হয়। তাদের তালিকা সরকার বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে দিয়ে থাকে। যাতে ঋণ খেলাপিরা কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা না পান। এমনকি দেশের বাইরেও যেতে না পারেন। আমাদেরকেও কঠোর হতে হবে অসাধুদের ব্যাপারে। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে থাকেন ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করার চিন্তুা থেকে।
অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের যোগসাজস এর প্রসঙ্গে টেনে অর্থমন্ত্রী বলেন, বারবার একই কায়দায় কোন কোন গ্রুপ ঋণ নিচ্ছে। আপনারা দিয়ে যাচ্ছেন। আগের ঋণের কোন খবর রাখছেন না। এটি আর হবে না। ব্যবসায়ী ও অসাধু ব্যাংকারদের পারস্পরিক সম্পৃক্তা এখানে স্পষ্ট। তাই দুইজনের বিরুদ্ধেই শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনে ক্রটি বিচ্যুতি থাকলে তা ঠিক করা হবে।
স্বল্প মেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগে সর্তক থাকতেও বলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য আমাদের বিকল্প আমানত উৎস বের করতে হবে। কামাল বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে তিন বছরের কর্মকাণ্ড ও চিত্র জানতে শিগগিরই বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করা হবে। হিসাব নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এটি করা হবে।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, রূপালী ব্যাংকে সুশাসনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চলতে হবে। লোকসানি শাখার সংখ্যা মাত্র ৮টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে যেটি অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংকই সর্বপ্রথম সকল শাখায় শতভাগ অনলাইন কার্যক্রম শুরু করে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ব্যবস্থাপকদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে সচেতন ও যত্মবান হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। স্বাগত বক্তব্যে এমডি বলেন, আমরা গত বছর বেশির ভাগ সূচকে উন্নতি করেছি। আমাদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিলো ৩১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। লোকসানি শাখা কমে দাড়িয়েছে ৮টি। এ সময় তিনি ব্যাংকটিকে আরো এগিয়ে নিতে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর দাবি করেন। বর্তমানে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৩৭৭ কোটি টাকা। যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এর ফলে আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকটি ব্যবসা করতে পারছে না। কম মূলধন ভিত্তি থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে অনাগ্রহ দেখায়। তিনি আরও বলেন, রূপালী ব্যাংক সত্যিকারেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান কাটিয়ে ব্যাংকটি এখন বিরাট অংকের মুনাফা করেছে।
ব্যবসায়িক সম্মেলনে সারা দেশের ৫৬৮টি শাখার ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ব্যবস্থাপকদের উৎসাহিত করতে ১০ সেরা ব্যবস্থাপককে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব