কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত বর্তমান পৃথিবী। বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও অসুস্থতার মধ্যেও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাহসী ও সময়োচিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা হলেও এ রোগের বিস্তার আগামী দিনগুলোয় বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।
ভবিষ্যতে পুরোপুরিভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে কোভিড-১৯–এর প্রতিষেধক টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে, যা জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। কিন্তু এই প্রতিষেধক আপামর জনসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছানো সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, প্রতিষেধকগুলোর সঠিক কার্যকারিতার জন্য সংরক্ষণ ও বিতরণব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল লজিস্টিকস (ওষুধ সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা) আর দশটি লজিস্টিকস শিল্প খাতের মতো নয়। এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জটিল শিল্পক্ষেত্র। সঠিক লজিস্টিক নিশ্চিত না হলে ওষুধ/টিকার সঠিক কার্যক্ষমতা তো থাকবে না, বরং নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৭৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ওষুধের সঠিক মান নিশ্চিত করে পেশেন্ট/ব্যবহারকারী পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য অতি আবশ্যক হলো তাপ নিয়ন্ত্রিত ওয়্যারহাউসিং, সুসমন্বিত হ্যান্ডলিং প্রসিডিউর, বিশেষায়িত পরিবহনব্যবস্থা, কঠোর রেগুলেটরি এবং নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিটি কমপ্লায়েন্স। কোভিড-১৯–এর এ সময়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ/টিকা/টেস্টিং কিট পরিবহনের ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল লজিস্টিকসের প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব আরও অনুভূত হয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল লজিস্টিকস খাতের পুরোধা প্রতিষ্ঠান ফার্মা সলিউশন বাংলাদেশ লিমিটেড বৈশ্বিক চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান ফার্মা সলিউশন, সাবেক জুলীগ ফার্মা বাংলাদেশ লিমিটেড দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যালস লজিস্টিকস কোম্পানি জুলীগ ফার্মা এশিয়া প্যাসিফিকের সাবসিডিয়ারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
স্টেট অব আর্ট ওয়্যারহাউসিং, বিস্তৃত সাপ্লাই চেইন, বিশেষায়িত পরিবহনব্যবস্থা এবং ভ্যালু অ্যাডেড পরিষেবার সমন্বয়ে ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেড বিভিন্ন বহুজাতিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ওষুধ/টিকা বাংলাদেশের রোগীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
পিএসবিএল ওয়্যারহাউসগুলো প্রকৌশল, স্থাপত্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ওষুধ/টিকা সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত, যা পরিপূর্ণভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিডিপি, ইউ জিডিপি, আইএসও ৯০০১: ২০১৫, জিএসডিপি, এইচএসইসহ বাংলাদেশে প্রযোজ্য সব রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সুচারু ব্যবস্থাপনার জন্য ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেড সমন্বিত করেছে বিশ্বের অত্যাধুনিকতম তথ্যপ্রযুক্তির।
পিএসবিএলের রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট নিখুঁত তাপ নিয়ন্ত্রিত ওষুধ সংরক্ষণসহ ২ হাজার বর্গফুটের বিশেষায়িত কোল্ড চেইন স্টোরেজ। দেশের প্রধান প্রধান শহরে গড়ে তোলা হয়েছে এর শাখা। এর মাধ্যমে বিভাগ থেকে উপজেলা পর্যন্ত এর পরিষেবা বিস্তৃত। ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেডের সম্মানিত গ্রাহক হিসেবে আছেন চিকিৎসক, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান ও বৈচিত্র্যময় চাহিদার আন্তরিক সাড়া দিতে ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএসবিএল) ৬৫০ জন দক্ষ ডিস্ট্রিবিউশন বিশেষজ্ঞ সদা প্রস্তুত রয়েছেন।
তাপমাত্রা সংবেদনশীল বায়োলজিক্যাল (ভ্যাকসিন) এবং অন্যান্য বিশেষ ওষুধ ওয়্যারহাউসিং ও বিতরণের জন্য পিএসবিএলের রয়েছে বিশেষায়িত অবকাঠামো। পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন তাপ অঞ্চলে বিভক্ত পিএসবিএলের ওষুধ সংরক্ষণাগার {৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (এম্বিয়েন্ট), ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (এয়ারকন), ২ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (কোল্ড চেইন), মাইনান ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (ফ্রোজেন) এবং মাইনাস ১৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (ক্র্যায়োজেনিক)}, যা বিশ্বের যেকোনো ফার্মাসিউটিক্যাল/বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট সংরক্ষণের জন্য আদর্শ।
পিএসবিএলের বিতরণব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি যেন রোগী পর্যন্ত টিকা/ওষুধের সর্বোত্তম কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে। এই লক্ষ্যে পিএসবিএলের আছে ৭৩টি ভ্যালিডেটেড তাপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যান এবং ভ্যালিডেটেড প্যাসিভ প্যাকিং সিস্টেম। সংরক্ষণাগার, সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা, বিতরণ ব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমগুলো সিজিএমপি এবং সিজিডিপির আলোকে বছরে দুবার ভ্যালিডেটেড, যা পিএসবিএলে সংরক্ষিত ও বিতরণকৃত পণ্যর মানের নিশ্চয়তা বিধান করে।
পিএসবিএল করোনাকালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিতরণ কার্যক্রমে অব্যাহত রেখেছে। করোনার টিকা বিতরণে যে ধরনের কোল্ড চেইন লজিস্টিকস ও প্রযুক্তিগত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, কোম্পানিটির সেই দক্ষতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম সেরা গবেষণাভিত্তিক ওষুধ/টিকা প্রস্তুতকারক গ্লাক্সকো স্মিথ ক্লেইনের টিকা সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা সংরক্ষণ ও বিতরণের অভিজ্ঞতা প্রায় ১২ বছরের। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ/টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এলাঙ্কো (ইলি লিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান), সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওষুধ/টিকা প্রস্তুতকারক নোভারটিসের ওষুধ/টিকা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি সংরক্ষণ ও বিতরণ করে চলছে।
পিএসবিএল প্রতিদিন লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে জরুরি ওষুধের সরবরাহ, যাতে তাঁরা দ্রুত প্রতিকার পান, প্রতিষেধক নিশ্চিত করতে পারেন এবং রোগ নিরাময়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই শিল্প খাতের গুরুত্ব কোভিড-১৯ টিকা বের হওয়ার পর আরও বেড়ে যাবে। আমরা জানি না কখন বা ঠিক কবে নাগাদ সেটা ঘটবে।
তবে যখনই হবে (এবং দ্রুত হবে বলেই সবাই আশা করছে), ফার্মা সলিউশনস বাংলাদেশ লিমিটেড প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা, কাঠামোগত প্রস্তুতি এবং সাংগঠনিক সামর্থ্য নিয়ে মানবতার সেবায় পূর্ণোদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমরা আশা করছি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর