ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা বসেছিল শেরপুরে। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেরপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের নবীনগর মহল্লার বিশাল রৌহা বিলে বসেছিল এ মেলা।
স্থানীয় নবীনগর এলাকাবাসী দুই শত বছর ধরে এ মেলার আয়োজন করে আসছে।
মেলাকে ঘিরে বসে ছিল পিঠা, মিষ্টি, সাজ, মুখরোচক খাবারসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মজাদার খাবারের পসরা। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরী বিভিন্ন তৈজসপত্র, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালার দোকানের পসরাও ছিল।
এদিকে মেলার আশাপশে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েস খাওয়ার উৎসব। এ উৎবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দূর-দুরান্তের আত্মীয়রা ছুটে আসে পিঠার স্বাদ নিতে।
রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করতেন এবং বাড়ির মেয়েরা ব্যস্থ থাকেন পিঠা-পায়েস তৈরিতে। দিনব্যাপী চলতো অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে ছুটে যেত মেলার মাঠে। এখন অবশ্য অনেক কিছুতে ভাটা পড়েছে। মেলায় গাঙ্গি খেলা (কুস্তি) ও সাইকেল রেস এর পাশপাশি জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে আসে অর্ধশত জন ঘোড় সোরোওয়ার। ঘোড় দৌড় এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ।
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন শেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলার মো. নজরুল ইসলাম।
পৌর শহরের অদুরে এ মেলার আয়োজন করা হলেও ঐতিহ্যগত ভাবে কোন রকম প্রচারণা চালানো ছাড়াই উপচে পড়া ভিড় পড়ে মেলায়। কত বছর পূর্বে এ মেলার প্রচলন হয়েছিল তা কেউ সঠিক বলতে না পারলেও আনুমানিক দুইশ’ বছরের ওপরে হবে বলে স্থানীয় বয়োঃবৃদ্ধ ও গ্রামবাসীদের দাবি।
এ মেলা মূলত পৌষ সংক্রান্তির মেলা হিসেবে ৩০শে পৌষ অনুষ্ঠিত হতো কিন্ত কৃষকরা এখন আগেই বিলে ধান লাগানোর জন্য প্রস্তত করে। তাই মেলা ৩০শে পৌষের আগেই অনুষ্ঠিত হয়। দিনে দিনে এ মেলার আকর্ষণ বাড়লেও আগের সেই উৎকর্ষ কমছে। পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন যুগ যুগ ধরে শেরপুর পৌরসভা এই মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে আগামীতে তিন দিন ব্যাপি এই মেলার আয়োজন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল