ঢালিউডের দুই শীর্ষনায়ক শাকিব খান আর অনন্ত যুদ্ধ পর্ব শেষ করেছেন গত বছরের রোজার ঈদে। এবারের ঈদে তারা মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। মানে গত ঈদে দুজনেরই অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছিল। আর এবার মুক্তি পাবে দুজনের নির্মিত এবং অভিনীত ছবি। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সেরা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দুজনই। যদিও গতবার অনন্তর ছবিটি নিজেই নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
গতবছর মুক্তি পাওয়া ছবি দুটি ছিল বদিউল আলম খোকন পরিচালিত শাকিব খান অভিনীত 'মাই নেম ইজ খান' এবং এম এ জলিল অনন্ত পরিচালিত এবং অনন্ত অভিনীত 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা'। গত বছর দুজনের ছবিই সমানতালে ব্যবসা করেছিলো। তবে অনন্ত তার ছবিটি দিয়ে মধ্যবিত্তসহ সবশ্রেণীর প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ দর্শককে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব দেখিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তাছাড়া 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' প্রযুক্তিগত দিক, গান, লোকেশনে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। আর সাধারণ শ্রেণীর খেঁটে খাওয়া দর্শক ছবিটি ব্যাপকহারে না দেখলেও মধ্য ও উচ্চবিত্তের আগ্রহে একটানা তিনমাসেরও বেশি সময় ছবিটি চলে স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা ও ব্লক বাস্টারস সিনেমা হলে।
আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক শামসুল আলম বলেন, আমাদের সিনেমা হলে 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' সাড়া জাগাতে পারেনি। কারন সাধারণ মানুষ শাকিবের ছবি দেখতেই পছন্দ করে। তাই 'মাই নেম ইজ খান' প্রদর্শন করে লাভবান হয়েছি।
অন্যদিকে, স্টার সিনেপ্লেক্স কর্মকর্তা মেজবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কমপ্লেক্সে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের দর্শক আসে। তারা উন্নত প্রযুক্তির ছবি দেখতে পছন্দ করেন। অনন্তর ছবিতে তা আছে। তাই আমরা অনন্তর ছবি প্রদর্শন করে ব্যবসায়িক সাফল্য পাই।
এদিকে, এবারের ঈদে মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খান প্রযোজিত প্রথম ছবি 'হিরো দ্য সুপারস্টার' এবং অনন্ত প্রযোজিত, পরিচালিত 'মোস্ট ওয়েলকাম টু'। দুটি ছবির নায়কও তারা দুজন। নিজেদের নির্মিত ছবি দুটি নিয়ে এবার একে অপরকে টেক্কা দিতে চান তারা। ইতিমধ্যে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন দুজন।
অনন্ত মিডিয়াকে বলেন, এবারের ঈদে প্রমাণ হবে কে সেরা। কারণ আমি অন্তর্জাতিক মান সমৃদ্ধ ছবি নির্মাণ করি। তাই শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আমার ছবির সমান চাহিদা ও জনপ্রিয়তা। ইতোমধ্যে 'খোঁজ দ্য সার্চ', 'দ্য স্পিড', 'মোস্ট ওয়েলকাম' এবং 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' দিয়ে তা প্রমাণ করেছি। এবার ঈদে আমার 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' ঢালিউডের সর্বকালের ব্যবসায়িক রেকর্ড অতিক্রম করবে বলে আমার বিশ্বাস।
অপরদিকে শাকিব খান বলেন, আমার ছবি খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দেখে। এতেই আমার সাফল্য। কারণ হাড়ভাঙ্গা পরিমশ্রম শেষে এসব মানুষ যখন আমার ছবি দেখতে ছুটে আসে তখন আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হই, আমার পরিশ্রম সার্থক হয়। তাছাড়া আমার ছবিতে বুক চিড়ে হৃদপিণ্ড বের করে আনার মত অবাস্তব ও হাস্যকর বিষয় নেই। আমার দর্শক ভুল উচ্চারণ দেখে হাসার জন্য সিনেমা হলে যায় না।
শাকিব বলেন, আমার প্রযোজিত ছবিটিতে ক্যামেরাসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে। তাই নির্মাণ, গান, গল্প, লোকেশনের দিক দিয়ে আমার ছবি হবে এবারের ঈদের সেরা ছবি।
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র হাসানুর রহমান বলেন, অনন্তর ছবিতে তার অভিনয়ের দুর্বলতা বাদ দিলে বাকি সবকিছুই আন্তর্জাতিক মানের এবং উন্নত প্রযুক্তির। তাই তার ছবি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক গুলশান শাখার কর্মকর্তা কাইয়ুমেরও একই বক্তব্য। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ বছর পর গত ঈদে 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' দেখতে সপরিবারে সিনেমা হলে গিয়েছি।
বাংলামোটরস্থ আলাউদ্দীন গার্মেন্টসের সুইং অপারেটর গুলশান আক্তার বলেন, শাকিবের নাচ, ফাইট ও অভিনয় দেখতে খুব ভালো লাগে। শুধু আমার একার নয়, গার্মেন্টে আমার প্রায় ৩০ সহকর্মী শাকিবের ছবি মুক্তি পেলেই দেখতে পরিবার নিয়ে ছুটে যায়।এবারের ঈদেও তার ছবি দেখব।
মোটর মেকানিক সাইফুলেরও একই বক্তব্য। শাকিবের অন্ধ ভক্ত তিনি ও তার বন্ধুরা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, এবারের ঈদে প্রথমবারের মতো অনন্ত এবং শাকিবের নির্মিত ও অভিনীত ছবি মুক্তি পাচ্ছে। শাকিব পরিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত নায়ক। আর অনন্তের চলচ্চিত্রে আগমণ বেশিদিনের নয়। তাই তাদের মধ্যে তুলনা চলে না। ভলো ছবি পেলেই দর্শক সেটি গ্রহণ করে। এই ঈদেও তাই হবে।