দিনকয়েক আগের ঘটনা। তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। শ্যামলী শিশুমেলার সামনে অফিসফেরত এক যুবককে বাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামালেন মধ্য বয়স পার করা চার নারী। তাদের অভিযোগ, যুবকটি নাকি তাদের একজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, বাসের ভেতরেই নাকি ওই নারীকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছেন কথিত অভিযুক্ত যুবকটি! আকষ্মিক ঘটনায় যুবকটি একেবারেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।
কথিত অশোভন আচরণকারী যুবককে বাস থেকে নামানোর পর বাসটি পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সংঘবদ্ধ ওই নারী চক্রের গলার আওয়াজ আরো চড়ে যায়। ‘ইভ টিজার’ বলে চিৎকার করে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি তারা ওই যুবকের শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এ সময় চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে থাকেন অসহায় যুবকটি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কৌশলী আচরণে ঘটনাপ্রবাহকে ততক্ষণে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে ফেলেছে ধূর্ত চক্রটি। অনেকেই এগিয়ে এলেন নারীদের সমর্থন দিয়ে যুবকটিকে শায়েস্তা করতে। নারীর সম্মান বলে কথা! ঘুণে ধরা আমাদের এই নষ্ট-দুষ্ট সমাজে এখনো এমন বেয়াদবের সংখ্যা অনেক আছে, যারা কন্যা-জায়া-জননীকে সম্মান করে না। আর এ কারণেই কেউ কিছু না বুঝেই সেদিনের সৃষ্ট জটলা থেকে ‘ধর-মার-সাইজ কর’ আওয়াজ উঠাতে থাকে।
এ অবস্থায় ঘটনাটির ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন ভদ্রলোক। তিনি ছবি তোলার পাশাপাশি ঘটনাটিও আরো তীক্ষ্ণভাবে দেখছিলেন। ওই নারীদের আচরণ সন্দেহ হলে তিনি তাদের পরিচয় জানতে চান। জবাবে অনেক অসংলগ্ন কথার পাশাপাশি নিজেদের সরকারি দলের নেতা-কর্মী বলে পরিচয় দেন তারা। এতে সন্দেহ জাগে উত্তেজিত জনতার মধ্যেও। এ অবস্থায় চিত্রগ্রাহক ভদ্রলোক উভয় পক্ষকে পুলিশে দেওয়ার প্রস্তাব করলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। চোখের পলকে কেটে পড়েন ওই নারীকুল।
এরপর সবার কাছে ঘটনাটি স্পষ্ট হয়ে যায়। উপস্থিত জনতা বুঝে যায়, এটি একটি নতুন চক্র। দল বেঁধে নগর পরিবহণের বাসে চেপে শিকার খোঁজে এরা। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে পকেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। শিকার টার্গেট করে এভাবে ট্র্যাপে ফেলে। তারপর, মিথ্যা অভিযোগ তুলে ‘নারীবাদী সেন্টিমেন্ট’কে কাজে লাগিয়ে শিকারের পকেট কাটে। সুতরাং, সাবধান! সাবধানের মার নেই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও চিত্রগ্রাহক সমাজসচেতন ওই ভদ্রলোক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি আপলোড করেছেন। পাশাপাশি, অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমার ফ্রেন্ডলিস্টে কোনো সাংবাদিক বন্ধু থাকলে জনসচেতনতার স্বার্থে এটি নিউজ করতে পারেন।’ এমন কিছু সচেতন ব্যক্তিদের জন্যই মাঝে মধ্যেই উঠে আসে সমাজের অনেক বিচ্যুতি যা সাধারণত খোলা চোখে অনেকেই দেখতে পায় না।