জাতিসংঘে মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত কেন পক্ষে ভোট দিলোনা, চীন রাশিয়া কেন বিপক্ষে ভোট দিলো, এই নিয়ে একটি মহল বেশ সোচ্চার। সরকার ব্যর্থ, শেখ হাসিনা ব্যর্থ, কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যর্থ। জামায়াত বিএনপির মতো এইসব বলতে বলতে নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করছেন। শুধু এইটুকুই বলবো পাণ্ডিত্য জাহির করার আগে নিজের মূর্খতা আয়নাতে একটু দেখে নিয়েন।
কেন বলছি আপনি কিছুই না জেনে কথা বলছেন, আসুন সেই বিষয়ে একটু আলোকপাত করি। কিছু না জানা থাকলে এতে লজ্জার কিছু নেই, শুধু কিছু বলার আগে সঠিক তথ্য জেনে নিন। লজ্জার বিষয় হলো কোনো ধারণা না থাকার পরও সেই বিষয় নিয়ে মূর্খদের মতো তর্ক করা।
রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করা, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা, সহিংসতায় দোষীদের শাস্তি দেয়া, এইসব বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে সম্প্রতি রেজুলেশন গৃহীত হয় এবং তা রেকর্ড সংখ্যক ভোটে পাশ হয়। বিশ্বের ১৩৫টি দেশ পক্ষে, সেখানে মাত্র ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ২৬টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। একই ইস্যুতে ২০১১ সালে যা ছিল যথাক্রমে ৯৪-২৫-৬৩। শেখ হাসিনার সরকারের কূটনৈতিক সফলতা এইখানেই।
এই সফলতার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করবেন না, মেনে নিলাম আপনারা অতটা ওদের প্রকৃতির মানুষ না। কিন্তু চীন, রাশিয়া কেন বিপক্ষে ভোট দিলো, কেন ভারত জাপান ভোট দানে বিরত ছিল, এই নিয়েই আপনাদের যত সমালোচনা। আর সমস্যাটা এই খানেই। এই খানেই আপনি অজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন।
আসুন জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত রেজুলেশনগুলোর অতীত ইতিহাস দেখে আসি। ২০১১ সালের পর মানবাধিকার ইস্যুতে ইরান, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার জন্য এই কমিটিতে গৃহীত রেজুলেশনগুলোর মধ্যে পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এইবার মিয়ানমার ইস্যুতে। বিপক্ষে কম ভোটের রেকর্ডও এইবার। আর এইটা হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুণ এবং বিশ্বব্যাপী তার ব্যক্তিত্বের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণেই।
এইবার আসেন ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়া প্রসঙ্গে আসি। প্রথমত হচ্ছে প্রতিটি দেশই তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়, অন্য কোনো দেশের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় নয়।
যদি চীন বা রাশিয়ার কথা বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেন এই দুটি দেশ এখন পর্যন্ত কান্ট্রি স্পেসিফিক কোনো রেজুলেশনে কোনোদিন পক্ষে ভোট দেয়নি, সবসময় বিপক্ষে দিয়েছে। এইবারও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা।
ভারতের অবস্থা প্রায় একই রকম। তবে ভারত মাঝে মধ্যে কান্ট্রি স্পেসিফিক রেজুলেশনে বিপক্ষেও ভোট দিয়েছে। কিছুদিন আগেই ২০১১ সালে মিয়ানমার সংক্রান্ত এরকম রেজুলেশনে ভারত বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এবার তারা ভোট দানে বিরত থেকেছে। এমনকি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলও রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো তথ্য জানার থাকলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটির ওয়েব সাইটে গিয়ে বিভিন্ন সময়ের রেজুলেশন ও ভোটিং সংক্রান্ত তথ্য দেখে নিতে পারেন। মনের সংকীর্ণতা দূর হবে আশা করি।
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন