আজ থেকে একশ সাতাশ বছর আগে
প্যারিস থেকে সাতাশ কিলো দূরে
অভর সু অইস নামের একটি সবুজ
বিস্তীর্ণ হলুদ গমক্ষেত ভরা গ্রামে
তোমার দুঃখী তর্জনী যখন টিপে দিল তার শেষ ট্রিগার,
গগনবিদারী সেই শব্দে
স্তব্ধ গোধূলির দিগন্তে এক ঝাঁক কালো কাক
পাখা মেলে সেই যে পালালো আর এলো না।
যদি আমি থাকতাম সেখানে,
তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো প্রিয় ভিনসেন্ট!
তোমার রঙমাখা কম্পমান কব্জির
দ্বিধান্বিত কব্জায় বন্দি ছিল যে কালো পিস্তল,
তার মাস্তুল বরাবর পরিয়ে দিতাম সুনিশ্চিত
তোমারই আঁকা একটি গাঢ় হলুদ সূর্যমুখি।
সেই ফুলের বুকের পাঁজর ঝাঁঝরা করা মাত্র
নিষ্ঠুর বুলেট তোমার অন্যায় অন্তিম ইচ্ছায়
বিন্দুমাত্র কান না দিয়ে সহস্র সূর্যমুখির
বন্যায় ভাসিয়ে দিত তোমারই আঁকা
নক্ষত্রখচিত রাত্রির বাঁকা কালো রাত।
তুমি এ কী করলে প্রিয় ভিনসেন্ট? যদি
একশ সাতাশ বছর আগে আমায় ইশারায়
আগেভাগে দিতে একটু খবর, কিছু না হোক
যদি তোমার শূরতোলা এক পাল কালো মেঘ
মুখে এঁকে হলুদের একটি জ্যান্ত ব্রাশ, পাঠিয়ে দিতে গঙ্গার পলিময় কোমল বঙ্গে।
যদি বিসমিল্লাহ খান জানতেন,
এমন বেদনাদীর্ণ তোমার হৃদয়,
তবে এমন ভৈরবীর তান ছুড়ে দিতেন
যেন তোমার ট্রিগার উন্মুখ তর্জনি নিজের ভুল বুঝে
রঙতুলি নিয়ে এঁকে দিত সানাই হাতে
এক অদ্ভুত আত্মপ্রতিকৃতি!
যদি ঘুনাক্ষরে একটু জানাতে তোমার
ঘুণধরা হৃদয়ে জমে থাকা রক্তজমাট,
আমি নিশ্চিত জাকির খানের তবলার
ত্রিতাল ঝড়ে উড়ে যেত বুলেটের পাখা,
শাখাপ্রশাখা মেলে তোমায় আগলে ধরত
অলিভের সবুজ অবুঝ বসন্ত বৃক্ষ।
তুমি এ কী করলে প্রিয় ভিনসেন্ট?
তোমার যাদুর স্পর্শে পৃথিবীর সকল সূর্যমুখি ফুল
এতদিনের ভুল বুঝতে পেরে যেই না মুখ
ঘুরিয়ে হলো উন্মুখ, লজ্জায় চটজলদি
গোধূলির আড়ালে মুখ লুকায় সূর্য।
তোমার রাতের আকাশ চুইয়ে নেমে আসে ঘন ঘুম
হলুদ গমক্ষেত জুড়ে মাতম নামে বুভুক্ষু নক্ষত্রের বিরহী চুম্বন।
কালো কাকেরা গোধূলীর বিষন্ন আকাশে উড়ায় মৃত্যুর সাম্পান।
কত পথ ঘুরে ঘুরে দিশাহীন শেষে
তোমার আইরিশ গুল্মের কাছে এসে
নি:স্ব আমি কি দিয়ে জানাই
তোমায় হৃদয়ের ভালোবাসা একশ সাতাশ বছর পরে!
তোমার শেষ শয্যায় শুয়ে থাকা সবুজ বাগান থেকে তাই একটি ফুল
মানবের অন্তঃরূপের অপরূপ রূপকার
ছিন্নমূল তোমার শিয়রে।
প্যারিস থেকে সাতাশ কিলো দূরে আমি
আর একশ সাতাশ বৎসর দীর্ঘশ্বাস
বহুদূর আলোকবর্ষ পার হয়ে মিলায় করুন কোরাস।
লেখক : কার্ডিওলজিস্ট
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭/ফারজানা