কাল রাতে এক বিন্দু ঘুম হয়নি। এ অবশ্য কোনো নতুন ঘটনা না। এরকম আমার প্রায়ই হয়। তখন আমি সকালটা ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেই। আজ ঘুম পুষিয়ে নেয়ার কোনো উপায় ছিল না। কারণ সকাল সাড়ে নয়টায় একটি অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকবার কথা। ইদানীং গান গাওয়া ছাড়াও স্টেজে উঠতে হয় আমাকে... কথা বলতে। ‘Motivational Speech’ কিংবা সহজ বাংলায় প্রেরণামূলক বক্তব্য দেয়ার জন্য মাঝে মধ্যে ডাক পড়ে আমার।
সেরকমই একটি আয়োজন ছিল আজ। ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (CTTC) আয়োজিত ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’। ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়েসী ছাত্রছাত্রীরা শ্রোতার আসনে বসা। সেখানে যেমন ভিকারুন্নেসা নূন কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থীরাও। আরো ছিলেন গণমাধ্যমের ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে কাজ করা বাঘা বাঘা সব সংবাদকর্মী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিটিটিসি প্রধান শ্রদ্ধেয় মনিরুল ইসলাম সামনে বসা তরুণদের কাছ থেকেই শুনতে চাইলেন তাদের মতামত- কেন তরুণরা উগ্রবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে? এই সহিংস উগ্রবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হিসাবে তরুণরা কি ভাবছে?
প্রথমেই লালবাগ মাদ্রাসার একজন তরুণ হাত তুলে কথা বলতে চাইলেন। তারপর স্পষ্টভাবে তরুণদের উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার কারণ আর তার প্রতিকার নিয়ে তার মতামত দিলেন। স্টেজে বসে থাকা আমরা একটু নড়ে চড়ে বসলাম! তারপর একে একে অন্য প্রতিষ্ঠানের তরুণ শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত দিতে লাগল।
আমি হতবাক! অনুষ্ঠান শুরুর আগে তরুণদের উগ্রবাদে ঝুঁকে পড়বার কারণ সম্পর্কে অনেক আলাপ চলছিল আমন্ত্রিত গুণীজনদের সাথে। সেগুলো পয়েন্ট করে নিয়েছিলাম আমার নোটপ্যাডে। পাশাপাশি প্রতিকারের সম্ভাব্য কিছু উপায়। একে একে তরুণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাবলীল মতামত দিচ্ছেন আর আমরা স্টেজে বসে অবাক হচ্ছি! নোটপ্যাডে লেখা পয়েন্টগুলো এক এক করে কেটে ফেলতে হচ্ছিল আমাকে! শিক্ষার্থীরা দেখলাম প্রাণবন্ত ভাবে মোটামুটি অনেকগুলো দিক উন্মোচন করে ফেলেছে! তাদের পাশাপাশি বলছিলেন চৌকস সংবাদকর্মীরা..!
আমি নতুন করে আমার বক্তব্য সাজালাম। চটপটে বাচ্চাগুলোর (আমার বয়স ৪০ এর কাছাকাছি তো, ওদেরকে বাচ্চাই মনে হচ্ছিল) কথা শুনে আমার/আমাদের খুব গর্ব হতে লাগল। অনুপ্রেরণা দিতে গিয়েছিলাম... বাচ্চাগুলোর কাছ থেকে এক ব্যাগ অনুপ্রেরণা নিয়ে ফিরেছি। কিছুদিন আগে বলা এই শিক্ষার্থীদের একটি কথা মনে মনে উচ্চারণ করলাম—
“যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ
যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ...”।
(মেহের আফরোজ শাওনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার