ভারতের বিহার রাজ্যটি প্রাচীন ভারতে তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল। মগধ, মিথিলা, ভোজপুর। ইতিহাসের পরিক্রমায় মিথিলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিদেহ রাজ্য। বিদেহ ছিল বিহারের মিথিলা ও নেপালের একাংশ নিয়ে গড়ে ওঠা রাজ্য যার রাজধানী ছিল এই মিথিলাতেই।
প্রাচীন ভারতের অন্যতম শক্তিকেন্দ্র ছিল এই মিথিলা। ইন্দো-আর্য সভ্যতার লীলাভূমি। শিল্প ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র।
মিথিলার ভাষা ছিল মৈথেলি। যা এখনো বিহার ও নেপালের পূর্বাঞ্চলের মানুষের ভাষা। প্রায় চারকোটি মানুষ এখনো মৈথেলি ভাষায় কথা বলে।
পঞ্চদশ শতকে মিথিলার সবচেয়ে বড় কবি ছিলেন বিদ্যাপতি। তিনি মৈথেলির সাথে হিন্দি মিশিয়ে এক কৃত্রিম সাহিত্যিক ভাষা তৈয়ার করেছিলেন। যা আজো ব্রজবুলি নামে পরিচিত। রাধা কৃষ্ণের ব্রজলীলার অসংখ্য পদ ব্রজবুলিতে লেখা। রবীন্দ্রনাথও এই ভাষায় অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন।
মরনরে তুঁহু মম শ্যাম সমান
বা শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা।
ব্রজবুলি ও মৈথেলি ভাষা বাংলাভাষার অনেক কাছের আত্মীয়। চর্যাপদের পর এই ভাষাই বাংলাভাষার সবচেয়ে নিকটবর্তী পূর্বসুরি। মৈথেলি ভাষা লেখা হয় দেব নাগরী লিপিতে যা বাংলা লিপির মতই অনেকটা।
পুরান মতে মিথিলা হলো সীতার বোন। বিদেহ রাজার দুইকন্যার এক কন্যা।
বিদ্যাপতির লেখা দুটি ব্রজবুলি বা অপভ্রংশ মৈথেলির দুই লাইন আপনাদের উদ্দেশ্যে পেশ করছি -
"নির্ধন বলিয়া পিয়ার না কৈলু যতন |
অব হাম জানলু পিয়া বড় ধন ||"
সময় থাকতে প্রিয়ার মূল্য না বুঝলে বিরহ পোহাতে হয়। বিরহেই উপলব্ধি হয় প্রিয়া বড় ধন।
আজ সে বিদেহ রাজ্য নেই, সেই মিথিলাও নেই। রাজা যায়। রাজ্যও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। থেকে যায় সংষ্কৃতি। সেই মৈথেলি - ব্রজবুলির গান কবিতা আজো সৌরভ ছড়ায়। বেঁচে থাকে মিথিলার কবি বিদ্যাপতির পদ-
এ ভরা ভাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা