সুবেহ সাদেকের আগে সেহরি খেতে হয়। সে মোতাবেক এ বছর রোজার মোট সময়কাল ১৫ ঘণ্টার বেশি, তাই সেহরিতে এমন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যাতে খাদ্যবস্তু হজমের পর অনেক বেশি সময় ধরে রোজাদারকে শক্তির জোগান দিয়ে কর্মচঞ্চল রাখতে পারে এবং তা যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয়। যাতে পরিপাকতন্ত্রের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয়। সেহরিতে লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি উত্তম খাবার, কারণ এ ধরনের খাদ্য হজম হতে বেশি সময় নেয় বলে রোজাদার ব্যক্তির ক্ষুধার অনুভূতি কম হয়ে থাকে এবং বেশি কর্ম সম্পাদনের যোগ্যতা বজায় থাকে। সেহরিতে মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, সবজি ও ফলমূল এবং দুধ-দধি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং রোজা পালনের সঙ্গে মানানসই। সেহরিতে ফলমূল বেশি গ্রহণ করলে সকাল বেলায় অলসতা দূর করে রোজাদারকে কর্মক্ষমতা দান করে। সেহরির পর অনেকেই ঘুমাতে বেশি পছন্দ করেন এবং অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েই কাটান, এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয় বরং সেহরির পর বেশি সময় ধরে না ঘুমানোই উত্তম। সেহরির সময় চা বা কফি অথবা সফট ড্রিকংস গ্রহণ না করাই উত্তম। কারণ এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণের ফলে রোজাদারের প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে শরীর শিগগিরই পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। সেহরির সময় অত্যধিক কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি, আলু, চিনি, মিষ্টি) ও তেলচর্বি জাতীয় (পোলাও, বিরিয়ানি, পরটা, মোগলাই, হালিম, তেহেরি, আইসক্রিম, কেক) খাবার না খাওয়াই উত্তম। কারণ এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে রোজাদারের অলসতা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণের ফলে কর্মদক্ষতা কমে গিয়ে এবং ওজন বৃদ্ধির ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। অনেকেই সেহরিতে অতিভোজন করে থাকেন এই ভেবে যে, অনেক সময় যেহেতু অভুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু সেহরিতে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের ফলে দিনের বেলায় ক্ষুধার অনুভূতি বেশি হয়ে থাকে এবং হজমের সমস্যা দেখা দিয়ে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। সেহরিতে ডিম ও মাংস পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা যাবে তবে গুরুপাক ও অত্যধিক মনলা সমৃদ্ধ খাদ্য না খাওয়াই উচিত, এতে হজমের সমস্যা ও পেটে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। রোজাদার ব্যক্তি সারা দিন অভুক্ত থাকার ফলে সন্ধ্যায় ইফতারের সময় ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়, খাদ্য গ্রহণের আগ্রহ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্য হজমের জন্য বেশি পরিমাণে পাচকরস নির্গত হওয়ায় খাদ্য হজমে দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটে। তাই অনেকে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু ইফতারে অতি তাড়াতাড়ি বেশি খাদ্য গ্রহণ এক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে যেমন বুকজ্বালা, ঢেঁকুর উঠা, পেটে এসিড বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। ইফতারিতে বেশি করে তরল খাদ্য ফলের রস, দুধ, দই, ফলের সরবত ও বেশি পরিমাণে পানি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা স্বাস্থ্যসম্মত। বিশেষ করে খেজুর, আঞ্জির, আম, কাঁঠাল, আনারস, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, আঙ্গুর, কমলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আপেল ইত্যাদি ফল খাওয়া উত্তম। তবে বেশি পরিমাণে চিনি ও গুড় মিশ্রিত শরবত ফ্রুট জুস, সফ্ট ড্রিংকস গ্রহণ না করাই ভালো। আমাদের উপমহাদেশে ইফতারির প্রধান আকর্ষণ এবং জনপ্রিয় খাবার ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, বড়া, রোস্ট, কাবাব, পাকুরা, হালিম, দইবড়া ইত্যাদি। ছোটবেলা থেকেই এসব আইটেম খেয়ে অভ্যস্ত এবং এসব খাবার সামাজিক ঐতিহ্যও বটে। এগুলো মুখরোচক হলেও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খাদ্যবস্তু ইফতারের সময় এমন পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে, যেন সঙ্গে ফলমূল ও পানি জাতীয় খাদ্যবস্তু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি না করতে পারে। মুখরোচক আইটেমের পরিমাণ যেন ইফতারের খাদ্য গ্রহণের অর্ধেকের বেশি না হয়।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।