বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের সামাজিকতায় রমজান মাস একটি মাহাত্দ্যপূর্ণ মাসের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। রমজান মাস সামাজিক আচার-আচরণে, কার্যকলাপে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এমনকি রমজান মাসে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে মুসলমানরা অনেক বেশি উদার বা উদাসীন মনোভাবের পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেকে মনে করেন রমজানে আমরা যত খুশি খাওয়া-দাওয়া করব এতে দোষের কিছু নেই। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা, কারণ খাদ্য এমন একটি বিষয় যা সব সময় একইভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তাই রমজান মাসে আপনি অধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে মোটাসোটা বা স্থূলাকায় হবেন এটাই স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। বেশি করে কার্বোহাইড্রেট বা চিনি মিষ্টি খেলে আপনার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হবে। বেশি তেল-চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণেও আপনার ওজন বাড়বে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে এটাও অবধারিত। তাই রমজান মাসে সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অত্যধিক চিনিযুক্ত খাবার ও অতিমাত্রায় তেল-চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে এবং অবশ্য অতিভোজন থেকে বিরত থাকতে হবে, তা না হলে আপনি এক মাসে যে পরিমাণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পতিত হবেন তা সারাতে অনেক মাস লেগে যাবে। সুষম খাদ্য বলতে এমন এক ধরনের খাদ্যকে বুঝায় যাতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও পানি। রমজান মাসে ভাত, মাছ, সবজি, ফলমূল ইত্যাদি বাদ দিয়ে আমরা যদি পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, কাচ্চি, পুরি, মিষ্টি, খিচুরি, ফিরনি, পায়েস ও মণ্ডা-মিঠাই ইত্যাদি খাদ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাই তবে শাক-সবজি, ফলমূল, ভাত-রুটি ও ফাইবারজাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাত্রা কমে গিয়ে, আমরা সুষম খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, তার মানে এই নয় যে, রমজানে আমরা ইফতারের মজাদার খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকব। তবে এসব মজাদার খাদ্য অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করব এবং রাতের খাবার ও সেহরিতে প্রয়োজনীয় শাক-সবজি, মাছ-ভাত অবশ্যই গ্রহণ করব। তবে হাঁটা ও ব্যায়ামের সময় পরিবর্তন করে নিতে পারেন। তবে শরীর অত্যধিক ঘেমে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়, এমন ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন। বিকালবেলায় হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে আপনার খাদ্য গ্রহণের আগ্রহ অনেকাংশে নিবৃত হবে এবং এ সময় যারা অত্যধিক ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করেন তাদেরও মানসিক চিন্তাবোধ ব্যায়ামে নিমগ্ন থাকায় ক্ষুধার জ্বালা কমে যাবে। যদি হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করার সময় মাথা হালকাবোধ করা বা মাথা ঘোরার উপক্রম হয়, তবে অবশ্যই হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়ামের গতি কমিয়ে দেবেন অথবা বন্ধ করে দেবেন। অনেক ব্যক্তি শারীরিক যোগ্যতা রোজা রাখার পর্যায়ে না থাকলেও রোজা ছাড়তে পারেন না বা ছাড়েন না। তারা জোর করে রোজা রাখার ফলে আরও বেশি দুর্বলতা অনুভব করে এবং রোজার মাসে কোনো ধরনের কার্যকলাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখে সম্পূর্ণ অলস জীবনযাপন করতে থাকে।
রোজার মাস সম্পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করে বা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। এসব ব্যক্তি সাধারণত বৃদ্ধ বয়সের ব্যক্তি অথবা রোগাক্রান্ত ব্যক্তি হয়ে থাকে এবং এভাবে ধুঁকে ধুঁকে রোজা রাখার ফলে তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বা অসুস্থতার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এসব ব্যক্তি মানসিক আবেগ ও প্রচণ্ড ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত বজায় না রেখে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ ধর্মেও এ ধরনের ব্যক্তিদের বেলায় রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।